হজরত ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিস সালামের বাবা ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশে জন্ম নিয়েছিলেন আল্লাহর হাবিব হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইসহাক আলাইহিস সালামের বংশে জন্ম নিয়েছেন শতাধিক নবী।
ইসহাক আলাইহিস সালামের প্রথম সন্তান ইয়াকুব আলাইহিস সালামও ছিলেন একজন নবী। তার আরেক নাম ছিল ইসরায়েল। তার বংশধররা বনি ইসরায়েল বা ইসরায়েলের সন্তান নামে পরিচিত লাভ করে ইতিহাসে।
এই বংশেই আবির্ভাব ঘটে নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামের। তার অনুসারি হিসেবে বনি ইসরায়েল ইহুদি নামে পরিচিত পেয়েছে। তারা এক সময় সঠিক আসমানী ধর্মের অনুসারি হলেও ইসলাম আগমনের পর অন্য সব আসমানী ধর্ম রহিত হয়ে যায়। এবং একমাত্র ইসলামকেই মনোনীত ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন আল্লাহ তায়ালা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত, ৩
মুসা আলাইহিস সালামকে আসমানী কিতাব তাওরাত দান করা হয়েছিলো। এই কিতাবে ইসলাম এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিলো।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কাবাসী ইসলামের পথে আহ্বান করেছিলেন, তার আহ্বানের সত্যতা সম্পর্কে জানতো ইহুদিরা। কিন্তু সত্য জানার পরও ইসলাম গ্রহণ করেনি তারা। উল্টো কুরায়শদের সঙ্গে মিলে ইসলামকে প্রতিহত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সত্য জেনেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বনী ইসরায়েলকে (ইহুদি জাতি) অভিশপ্ত বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
তাদেরকে অভিশপ্ত করার কারণ কোরআনের হাদিসে বর্ণনা করেছেন আল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ বিষয়ে হজরত আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এভাবে পাপাচারের সূচনা হয় যে, কোন ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইকে পাপাচরে লিপ্ত দেখলে সে তাকে তাকে নিষেধ করতো। কিন্তু পর দিন সে তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখে নিষেধ করতো না, বরং তার সাথে মেলামেশা ও উঠাবসা করতো এবং তার সঙ্গে পানাহারে অংশগ্রহণ করতো।
ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের পরস্পরের অন্তরকে মৃত্যুদান করেন। তাদের সম্পর্কে তিনি কোরআন মজীদে আয়াত নাজিল করেন।তিনি বলেন, ’’বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা দাউদ ও মরিয়ম-তনয় ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। তা এজন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী।
তারা যেসব গর্হিত কাজ করতো তা থেকে তারা একে অপরকে বারণ করতো না। তারা যা করতো তা কতই না নিকৃষ্ট। তাদের অনেককে তুমি কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে দেখবে। কত নিকৃষ্ট তাদের কৃতকর্ম যে কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। তাদের শাস্তিভোগ স্থায়ী হবে। তারা আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং যা তার প্রতি নাজিল হয়েছে তাতে বিশ্বাসী হলে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতো না। কিন্তু তাদের অনেকেই সত্যত্যাগ।’ (সূরা আল মায়েদা, (৫), আয়াত, ৭৮-৮১)।
রাবী (হাদিস বর্ণণাকারী) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বলেন, না! তোমরা জালেমের হাত ধরে তাকে জোরপূর্বক সত্যের উপর দাঁড় করিয়ে দিবে। ( ইবনে মাজা, হাদিস, ৪০০৬)
বনী ইসরায়েল (ইহুদি জাতি) অভিশপ্ত হওয়ার আরও ১০ টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে সূরা নিসার ১৫৫-১৬১ আয়াতে। সংক্ষেপে কারণগুলো হলো, (১) ব্যাপক পাপাচার (২) আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম গ্রহণ করতে মানুষ বাঁধা দেওয়া (৩) তাদের ধর্মে সূদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সুদ খাওয়া (৪) অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৫) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা (৬) নবিদের হত্যা করা (৭) আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম গ্রহণ না করে অজুহাত দেওয়া যে আমাদের অন্তর তালাবদ্ধ, নতুন কোনো ধর্ম গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। (৮) কুফরি করা (৯) মারিয়ামের (আ.) প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া (১০) ইসাকে (আ.) শূলে বিদ্ধ করে হত্যার মিথ্যা দাবি করা।
বিএসডি/এমএম