নিজস্ব প্রতিবেদক,
খুলনা অঞ্চলের বন্ধ ঘোষিত ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রাংশ চুরি হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিল ও জেজেআই জুট মিল থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বিজেএমসি’র সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিলগুলোর নদী তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। মিলগুলোর নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক জায়গার কাটা তারের বেড়া উধাও হয়ে গেছে। এসব জায়গা দিয়ে অপরাধীরা সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়া, মিলগুলো শ্রমিকশূন্য হয়ে পড়ার কারণে নজরদারিও অনেকটা কমে গেছে। ফলে মিলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হতে শুরু করেছে। এরমধ্যে গত ২৩ আগস্ট ক্রিসেন্ট জুট মিলের ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকার মালামাল ও ৯ সেপ্টেম্বর যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রির (জেজেআই) ৯৩ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়।
সূত্রমতে, খুলনা অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের মধ্যে আলিম জুট মিলে ২৫০টি, কার্পেটিং জুট মিলে ৮৬টি, ইস্টার্ন জুট মিলে ২৭৫টি, জেজেআই জুট মিলে ৪৬৬টি, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে ৯৫৭টি, স্টার জুট মিলে ৭৭০টি, খালিশপুর জুট মিলে ৯১টি, দৌলতপুর জুট মিলে ২৫০টি ও ক্রিসেন্ট জুট মিলে সর্বাধিক ১ হাজার ১৩৮টি তাঁত রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়াও মিলগুলোতে শত শত কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রয়েছে। তবে, বন্ধের পর পাটকল এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা এবং পাটকলগুলোর নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ আনসার নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কার্পেটিং, জেজেআই, খালিশপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলে আনসাররা দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনার ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বর্তমানে এক হাজার চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এরমধ্যে ৩৬৪ জন কর্মকর্তা ও ৬৪০ জন কর্মচারী। এছাড়া বন্ধঘোষিত পাটকলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৯৮ জন আনসারসহ ৩৫১ জন নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক শ্রমিক মুরাদ হোসেন জানান, ক্রিসেন্ট জুট মিলের নদী তীরবর্তী ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। অনেক জায়গার কাটা তারও চুরি হয়ে গেছে। মিলটির নিরাপত্তার জন্য ১২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী লাগে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। যা দিয়ে কোনোভাবেই মিলটির নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ খুলনার আহবায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা জানান, বন্ধ ঘোষণার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে জেজেআই জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের কয়েক লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এই সব চুরির সঙ্গে পেশাদার চোর ও মিলগুলোর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন। এখনই এ বিষয়ে সতর্ক না হলে অরক্ষিত পাটকলগুলোর বাকি মালামালও চুরি হওয়ার আশ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজেএমসির ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) মো. গোলাম রব্বানী জানান, বন্ধের পর পাটকলগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ৯৮ জন আনসার সদস্য ও বিজেএমসির ২৫৩ জনসহ ৩৯১ জন নিরাপত্তারক্ষী পাটকলের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাতে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছে।
জেজেআই ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের চুরির কথা স্বীকার বলে মো. গোলাম রব্বানী জানান, দুটি জুট মিলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলের চোর ধরা পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের নয়টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২ জুলাই পাটকল বন্ধসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় শ্রমিকদের অবসায়নের প্রজ্ঞাপন প্রতিটি মিলের নোটিস বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়।
বিএসডি/আইপি