নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন করা হবে। তবে স্বল্প ভাড়া দিয়ে তাদের থাকতে হবে। পাশাপাশি গ্রামে যেতে চাইলেও তাদের সহযোগিতা করা হবে। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ হাজার ৭৭৪টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়িত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকার আজিমপুর, মতিঝিল, মালিবাগ, তেজগাঁও ও মিরপুরে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ৩২টি ভবনে মোট ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট, মাদারীপুরে দেশের প্রথম ১০ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত অফিস ভবন এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত মিরপুরের সেকশন-১১ এ বস্তিবাসীদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। তিনি সবসময় একটি কথাই বলতেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, তারা উন্নত জীবনের অধিকারী হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রোগে-শোকে ছিল। শিক্ষার আলো পেত না। তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য। এ জন্য ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি থেকে তিনি ধাপে ধাপে জাতিকে মুক্ত ও স্বাধীন করেছেন। আর এই দাবির সংগ্রামের মধ্যেই তাকে জেলে নিয়েছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করতে চেয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সাড়ে তিন বছর একটা রাষ্ট্রের জন্য কম সময়। তখন তো একটা প্রদেশ ছিল, সেটা দেশে উন্নীত করা ও তার গঠন করা; এটা তিনি করে গেছেন। কিছু বেইমান-মুনাফেকের জন্য তার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সময় আমরা দেশের বাইরে ছিলাম। আমার দল ও বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় ফিরে আসি। আমার আসার পথ সহজ ছিল না। তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারীরা নানা বাধা সৃষ্টি করেছে। আজকে আমরা ক্ষমতায়। সরকারে থেকে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং সংবিধানের আলোকের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আমরা কাজ করাব, তাদের ভালো-মন্দও তো দেখতে হবে। আজিমপুর সরকারি কলোনিতে গ্যাস ছিল না, আমিই আব্বাকে বলে সে গ্যাসের লাইন করে দিয়েছিলাম। আমি সরকার গঠন করে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সকলকে ফ্ল্যাট করে দেব, সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেব, যাতে কর্মকর্তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা মহকুমাকে জাতির পিতা জেলায় রূপান্তর করেন। জেলা গভর্নর নিয়োগ দেন, যেন প্রত্যেকটা জায়গা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারে। ৭৫-এর পর এ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলা হয়। এখন আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। যাতে এক জায়গা থেকে সব সেবা পাওয়া যায়। পরে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন করে দিয়েছি। এখন মাদারীপুরে জেলায় কমপ্লেক্স করে দিলাম। এক ছাদের নিচে সব সরকারি সেবা পাবে মানুষ। সব জেলা ও উপজেলায় কমপ্লেক্স করে দেব। অফিসারদের থাকার জন্য ফ্ল্যাটও করে দেব।’
দেশনেত্রী বলেন, ‘আমরা ঘরেফেরা কর্মসূচি নিয়েছি। কোনো বস্তিবাসী যদি নিজ গ্রামে যায়, তাকে ঘর করে দেওয়া, কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ করে দেব। ঋণ দেব। বস্তিতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে, এটি অস্বাস্থ্যকর ও বসবাসের অনুপযোগী। এ জন্য তাদের জন্য সুন্দর ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আজকে ৩০০ পরিবারকে ৩০০ ফ্ল্যাট দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ফ্ল্যাট দেব। কেউ গ্রামে যেতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করব। গ্রামের ঘরবাড়ি করে দেব। ঢাকায় ফ্ল্যাটে থাকলে মাসে ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। গ্রামে গেলে সব বিনামূল্যে করে দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’
আরও পড়ুন :
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘পূর্বাচলে যাদের জমির মালিকানা ছিল, তাদের একটা করে প্লট করে দেওয়ার কথা ছিল। সেটা কেউ করেনি। আমাদের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নামমাত্র মূল্যে তাদের প্লটগুলো দিয়েছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার।
বিএসডি/এমএম