ক্রীড়া ডেস্কঃ
যারা টিভি পর্দায় চোখ না রেখে হঠাৎ স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়েছেন, তাদের হয়তো চোখ কপালে উঠার দশা! মিরপুরে শেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ১৪০ ছুঁয়েছে মাত্র একবার, সেখানে কি না পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে স্কোরবোর্ডে দেড়শ ছাড়ানো সংগ্রহ পেয়েছে কিউইরা! অনেকেই হয়তো হিসাব-নিকাশে বসে গেছেন এতক্ষণে, ১৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে এই মাঠে ম্যাচ জেতা কি আদৌ সম্ভব?
যারা এমন ভাবনার জগতে আছেন, তাদের একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শুরুর ৪ ম্যাচও ঘরের মাঠের ফায়দা নিয়েছিল বাংলাদেশ। মন্থর উইকেটের ফায়দা কাজে লাগিয়ে অজিদের পর ব্ল্যাকক্যাপসের বিপক্ষেও সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সিরিজ জয় শেষ হওয়ায় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভাবনা থেকে কিছুটা সরে এসেছে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে আজ (শুক্রবার) ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। এই সিরিজের আগের ম্যাচগুলো হয়েছিল ৩ ও ৫ নম্বর উইকেটে। আজ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ৪ নম্বর উইকেটে খেলতে নেমেছে দুই দল। যেখানে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের শাসন করে স্কোরবোর্ডে ১৬১ রান তুলেছে সফরকারীরা।
আগেই সিরিজ জেতায় আজ একাদশে চারটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা। সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, শেখ মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পরিবর্তে সুযোগ পান সৌম্য সরকার, শামীম পাটোয়ারী, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্র। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরতে পারতেন রাচিন। নাসুমের বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছাড়েন শামীম পাটোয়ারী। জীবন পেয়ে পরের দুই বলে হাঁকান চার ও ছক্কা। ওই ওভার থেকে আসে ১২ রান। ইনিংসের প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান খরচ করা তাসকিন আহমেদ তৃতীয় ওভারে এসেও তুলনামূলক কৃপণ ছিলেন।
বল হাতে তাসকিনের শুরুটা ভালো হলেও আরেক পেসার শরিফুল ইসলামের ফেরাটা ছন্দময় ছিল না। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে ১৯ রান দেন তিনি। তাকে মিড উইকেট দিয়ে হাঁকানো ফিন অ্যালেনের ছক্কাটি ছিল দেখার মতো। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভার ও নিজের দ্বিতীয় ওভার বল করতে এসে সফলতার দেখা পান শরিফুল। তার শর্ট বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে রাচিন ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের হাতে। ১২ বলে ১৭ রান করে আউট হন তিনি।
শরিফুলের পরের বলেই খুনে মেজাজে ব্যাট করতে থাকা ফিন অ্যালেনের বিপক্ষে জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদন হয়। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান অ্যালেন। কিন্তু পরের বলেই বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান শরিফুল। ২৪ বলে ৪ চার ৩ ছক্কায় ৪১ রান অ্যালেনের ব্যাটে। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৫৮ রান কিউইদের।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর রানের গতি ধরে রাখতে পারেননি উইল ইয়াং, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমরা। বলা ভালো গতি ধরে রাখতে দেননি আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শামীম পাটোয়ারীরা। ইনিংসের নবম ওভারে প্রথমবারের মতো হাত ঘোরাতে এসেই সফল হন আফিফ, ৬ রানে ফেরান ইয়াংকে। শুধু ম্যাচেই নয়, প্রায় দেড় বছর আর ১৫ ম্যাচ পর বল হাতে নিলেন তিনি।
এরপর গ্র্যান্ডহোমকে ফেরান নাসুম। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান আউট হন ৯ রান করে। তাসকিনের আহমেদের প্রথম শিকার হ্যানরি নিকোলস। উইকেটের পিছনে চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরান নুরুল হাসান সোহান। নিকোলসের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার ভিড়ে ব্যাট হাতে দলের হাল ধরে রাখেন অধিনায়ক টম লাথাম। শেষদিকে কোল ম্যাককঞ্চিকে নিয়ে জুটি গড়েন লাথাম।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৪৩ রান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬১ রান। ফিফটি হাঁকানো টম লাথাম ৩৭ বল খেলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। যেখানে সমান দুটি করে চার-ছক্কা মারে তিনি। ম্যাককঞ্চির ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ইসলাম ৪৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন। তাসকিন, আফিফ, নাসুমরা নেন ১টি করে।
বিএসডি/এএ