শিবু দাশ সুমিত
Many see Bangladesh as a ‘market’ of over 30 million middle and affluent-class people and a ‘development miracle’. To me our strengths are the societal values and peoples trust in Bangladesh. -মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার যে দৃপ্ত পদক্ষেপ শুরু হয়েছিলো সেটি আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পাচ্ছে। উন্নয়নের ব্যাপকতা তখনই পরিলক্ষিত হয় যখন কোন একটি সরকার কাজ করার জন্য লম্বা সময় পায়। যেটি বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব এবং বাংলাদেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৩ বছরের কাছাকাছি সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে। এসময়ে আমাদের অর্জন কিন্তু নেহায়েত কম নয়। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত অকৃত্রিম স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বর্তমান সরকার। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বৈষম্য-ঘুষ-দুর্নীতি-অনাচার এবং কুসংস্কারমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যে দেশটিকে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা ও একখণ্ড উর্বর ভূমি এনে দিয়েছিলেন সেই দেশটিই আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। যে দেশের প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অভিহিত করেছিলেন সেই দেশেই অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এদেশে এসে বলে যান – “I’ve been very impressed with what I’ve seen in Bangladesh – the many examples of innovation in fighting poverty, empowering women, and battling climate change; the warmth from so many people who have welcomed me; and the strength of your leadership inside and outside government, including many who fought for the independence of this nation. I’ve seen history unfold before my eyes, and I can see a bright future for the people of this country.” ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক এবং কানাডার আদালতে মামলাও ঠুকে দেয়া হয়। অবশ্য যেটি ২০১৭ সালে ঘোষিত এক রায়ে কানাডার আদালত ভিত্তিহীন এবং অনুমান নির্ভর বলে বাতিল করে দেয়। বাংলাদেশকে নিয়ে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের করা আরেক দূর্দান্ত উক্তি ছিলো এমনঃ ‘বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে।’ এজন্যই হয়তো কবি বলেছেনঃ ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ “আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার ফরেস্ট আছে,আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে। যদি ডেভেলপ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ এদিন থাকবে না।” -স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ মার্চ ১৯৭৫ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য আজ আমার সোনার বাংলাদেশ। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে ভূমিধ্বস সফলতা অর্জন করেছে। যে জাতিসংঘে একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিরুদ্ধে ভোট হয়েছিল সেখানেরই কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) ২০২১ সালের ২৬ ফ্রেবুয়ারি জানায় বাংলাদেশের তিনটি সূচকের ভিত্তিতে (১.মাথাপিছু আয়, ২.মানবসম্পদ সূচক যেটি কিনা শিক্ষার হার, স্কুলে ভর্তির হার, পুস্টি, স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার ও মাধ্যমিকে লিঙ্গ সমতার হারের উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয় এবং ৩.অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচক) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্ত উত্তরণ ঘটেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যেখানে আছে বাংলাদেশঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ ও গতিশীল রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখিয়েছেঃ জিডিপি প্রবৃদ্ধিঃ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.০৫% ,যা করোনা পূর্ববর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেটি রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮.১৫% এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী সেটি ৫.৪৭%। মূলত কোভিড-২০১৯ অতিমারীর কারণে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি কিছুটা নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘Global Economic Prospect, June 2021’ প্রতিবেদনে ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫.৬ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছে। অস্থিতিশীল এ প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক হলো মহামারী মোকাবেলায় রাষ্ট্রসমূহের গৃহীত পর্যাপ্ত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম এবং ভ্যাক্সিন-এর প্রাপ্তি। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে কম উৎপাদনশীল খাত হতে অধিকতর উৎপাদনশীল খাতের দিকে যাচ্ছে। যেখানে জিডিপি’তে ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষির অবদান ছিল ১৮.৪%, সেটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৭%। একই সময়ে শিল্প খাতের অবদান ২৬.৮% হতে বেড়ে ৩৫% এ দাঁড়িয়েছে। সেবা খাতের ক্ষেত্রেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের সফলতা ও পদক্ষেপসমূহঃ “শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ প্রণয়ন। গত ৪ বছরে বিনামূল্যে ৯২ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। সকল পাঠ্যপুস্তক ই-বুকে রূপান্তর। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা। ১৭ বছর পর পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করে সংস্কার ও নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন। ২৩,৩০০ স্কুলে-কলেজ-মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন। পৌনে ৫ বছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় স্নাতক পর্যায়ের ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন ছাত্রীকে মোট ৭৫.১৬ (পচাত্তর কোটি পনের লক্ষ) কোটি উপবৃত্তি প্রদান। ইংরেজি, গণিত ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৫৮ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রায় ৭০০০ স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার একাডেমিক বিল্ডিং ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টি বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২% যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৫২% স্বাস্থ্যখাতের অর্জনঃ ০২ এপ্রিল ২০২০ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, “প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে- করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় দেশটিতে ২০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে জাতিসংঘের আশঙ্কা।” বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত করোনাতে বেশ ভালোই সাপোর্ট দিয়েছে তবে কিছু হতাশা থাকবেই যেটা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠা সম্ভব। অতিমারীর এই সময়ে যেখানে বিশ্বের অনেক দেশই কোভিড সংক্রমণরোধে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্ধকোটি মানুষের টিকাদান সম্পন্ন করেছে। টিকা নিবেন না বলার পরও যারা টিকা গ্রহণ করেছেন তাঁদের জন্য কবি মাহবুব আলমের কয়েকটি লাইন উৎসর্গ করলাম- “আমি মানুষ দেখেছি আমি অমানুষ দেখেছি আমি মানুষ চিনেছি আমি অমানুষ চিনেছি” ২০০৯ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৬৭.৯ বছর যা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০-২১ অনুযায়ী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৮ বছরে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৯ সালে যেখানে ছিল ২.৫৯ জন (প্রতি হাজারে) সেটি ২০১৯ সালে কমে হয়েছে ১.৬৫ জনে (প্রতি হাজারে)। ২০২২ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু প্রতি লাখে কমিয়ে ১২১ জনে আনার জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের যে টার্গেট রয়েছে তাতে মাতৃমৃত্যু কমিয়ে ৭০ জনে আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে সরকার। সরকার সারাদেশে ১৩৭৭৯ টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে যেখান থেকে হাজার হাজার গ্রামীণ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।
২। ডিজিটাল বাংলাদেশঃ “ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন,যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর মূল লক্ষ্য, একুশ শতকে বাংলাদেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলা এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা।” -মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর যখন প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কনসেপ্টি উল্লেখ করা হয় তখন অনেকেই এটিকে অবান্তর, অবাস্তব এবং কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৩ বছর পর আজ যেটি তাঁদের কাছে দৃশ্যমান সেটি ২০০৮ সালেই বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্ভব বলেই বিশ্বাস করেছিলেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি এতো শক্তিশালী ও এর ব্যাপকতা এতো বিশাল হতে পারে হতে তা একমাত্র দূরদর্শী নেতৃত্বের পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবয়বটা একটু দেখা যাকঃ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের কাছে খুব সহজে বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। ই-কমার্স ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে আইটি সেক্টরে বহু মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক হাজার ইন্টারনেট সংযোগের ফলে নতুন ৮০টি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দেশে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীর সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ। যার ফলে বর্তমানে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৬.৮৪ কোটি, ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি, 4G গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪.৫০ কোটি, সারাদেশে ৬৭৯০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৮৫ লক্ষ সংখ্যক নাগরিক সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং এটি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭৭২৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নঃ ‘সেদিন সুদূর নয় যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।’ -নারী, কাজী নজরুল ইসলাম গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে পুরো বিশ্বে আমাদের দেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোন দেশ শীর্ষ ১০০ দেশের তালিকায় স্থান পাইনি। সুতরাং এটি বলা যেতেই পারে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশ থেকে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি নারীদের ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সব পর্যায়ে নারীদের সম অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিশেষ বিধান প্রণয়নের ক্ষমতাও সংযোজন করা হয় (অনুচ্ছেদ ২৭ ও অনুচ্ছেদ ২৮)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই সব পর্যায়ে লিঙ্গ সমতা, নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেন এবং বাস্তবিক অর্থে সব পর্যায়ে তা সুসংহত ও কার্যকর করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ২০১৭-১৮ সালের অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ২৮ শতাংশ নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল যেটি ২০১৮-১৯ সালে ২৯.৬৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৯৯.৪ শতাংশ। সরকার বিনামূল্যে ৬-১০ বছর বয়সী সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয় এবং স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে মেয়েদের দেওয়া হচ্ছে উপবৃত্তি যা মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে তাঁদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের এককালীন ২০০ টাকা করে দেয়া হবে যাতে করে তারা তা স্কুলের পোশাক তৈরির কাজে খরচ করতে পারে। কৃষিতে বিপ্লবঃ “কৃষিতে সাফল্যে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল।” -মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনে স্বংয়সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিগত ১২ বছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ ভাগ, যার পরিমাণ ১০২ লাখ টন। এছাড়া সবজি, ডাল, পেঁয়াজ, আলু এবং তৈলবীজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৫৩৪, ৪৪৩, ২৪৮, ৯৬ ও ৭৫ ভাগ। এ সময়ে বিভিন্ন ফসলের ৬৫৬টি উন্নত/উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। সারের মূল্য কমিয়ে ডিএপি প্রতি কেজি ৯০ টাকা হতে ১৬ টাকা, টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা এবং ইউরিয়া ২০ টাকা হতে ১৬ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ফসলের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে ১৪ লাখ ১ হাজার ৫৮২ টন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন-সহায়তা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা বাবদ ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ সুবিধার আওতায় ১০ টাকায় ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৪ কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ ভাগ সুদে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে ১১.১২ লাখ হেক্টর, খাল পুনঃখনন ১০ হাজার ৭৩৬ কিমি, সেচনালা-স্থাপন ২৬ হাজার ১১৪ কিলোমিটার, রাবার-ড্যাম নির্মাণ ১১টি, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৯ হাজার ১৫টি, শক্তিচালিত পাম্প স্থাপন ৭ হাজার ৪৩৪টি, গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনর্বাসন ১৯ হাজার ১০৮টি এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর। তথ্যসূত্রঃ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।