নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বাংলাদেশ কারো তালুকদারি নয়’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বুধবার দুপুরে শাহজানপুর বিএনপির এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নির্বাচন বিলম্ব নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে যখন ভোটের সময় আসছে এখন বলেন, এটা না করলে ভোট হবে না, ওইটা না করলে ভোট হবে না… কেন রে ভাই কেন? আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুকদারি ভেবেছিল যার কারণে যা-খুশি তাই হয়েছে। আপনারাও কি তাই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারও তালুকদারি নয়।
আব্বাস বলেন, এই দেশ জনগণের। সুতরাং কথাবার্তা বলার সময়ে হিসেব করে বলবেন। যাতে আমাদেরকে বে-হিসাবি কথা বলতে না হয়।
তিনি বলেন, অনেকের ভেতরে কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে যারা শুধুমাত্র বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করে, কার্যকর কোনো বিরোধিতা নয়। এই দলগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্ন থেকে ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেলো… দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নাই। তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না।
নির্বাচনের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারা লম্বা লম্বা কথা বলেন আজকে.. নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া যাবে না… তারা বুকে হাত দিয়ে বলেন, এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের ক‘জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন? বিএনপির ৪২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। আপনাদের ক‘জন হয়েছে?”
রাজধানীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে শাহজাহানপুরে রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে বিএনপির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামোর মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়।
‘গণমাধ্যমের সমালোচনা’
মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকাল অনেক দলের কথা পত্র-পত্রিকায় লেখেন না, অনেক দলের খারাপ কথা লেখেন না, ভালো কথা হয়ত লেখে দুই-একটা। আর বিএনপির ভালো কথা লেখে না। খারাপ দুই-একটা লেখে দেয়।
তিনি বলেন, একটা কথা আছে না… সব পাখি মাছ খায় দোষ করে মাছরাঙা। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে সহজ। মরহুম সাইফুর রহমান বলতেন, সিলেটি ভাষায় বলতেন.. হাড্ডির পাশের মাংস খাইতে খুব মজা লাগে। বিএনপি একটি বড় দল, গুছানো দল, সুন্দর দল…. এই দলের বদনাম করতে খুব মজা লাগে মানুষের।
‘চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করুন’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে অনেকে বদনাম করতেছে। কিন্তু ওই সমস্ত লোকগুলো অপকর্ম করে, চাঁদাবাজি করে, দুষ্কর্ম করে, দায় চাপিয়ে দেয় বিএনপির ওপরে। এই সমস্ত চাঁদাবাজদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে, মুখের কথা অথবা কাজে। যদি না করেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বার বার বলেছেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান… আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন। আমরা একটা এলাকায় এক‘শ কর্মী আছে দুইটা কর্মী খারাপ… বদমাইশি অপকর্ম করে। আমার ৯৮ জন কর্মী তো খারাপ না। সুতরাং দুজন লোকের জন্য আমার সমস্ত কর্মী কালিমা লিপ্ত হবে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যদি কোনো চাঁদাবাজ ঢুকে পড়ে কিংবা আসে… অনেক চাঁদাবাজ কিন্তু আওয়ামী লীগের.. এখন দলের মধ্যে আছে। সব দলেই… বিএনপিতে আছে, জামায়াতে আছে এবং অন্যান্য সংগঠনে ঢুকে গেছে তারা, সব দলে কম-বেশি আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে। ওই সমস্তদের চিহ্নিত করেন, চিহ্নিত করে ওদের দল থেকে বের করে দেন অথবা পুলিশে সোপর্দ করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপিতে কোনো অপকর্মকারী, কোনো দুষ্কৃতকারী, কোনো চাঁদাবাজির জায়গা হবে না, হবে না… কেনো খারাপ লোকের জায়গা বিএনপিতে হবে না… এই কথা মনে রাখবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।