নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম ‘বিমসটেক’ সনদের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করার সর্বনিম্ন বয়স সংক্রান্ত আইএলও’র কনভেনশন অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা হালাল পণ্য, ফ্রিল্যান্সিং, করোনার প্রেক্ষাপটে মেডিক্যাল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘রফতানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’ এর খসড়ায়ও অনুমোদন দিয়েছে। নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এজন্য দুটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এসব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ কথা জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পঞ্চম বিমসটেক সম্মেলনের গ্রহণ ও স্বাক্ষরের জন্য বিমসটেক সনদ মন্ত্রিসভায় দেয়া হয়। আগামী ৩০ মার্চ শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে পঞ্চম বিমসটেক সম্মেলন হবে। এর আগেই সনদ সই করতে হবে। সনদে ১১টি অধ্যায় এবং ৩৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। বাংলাদেশ বিমসটেকের সেক্রেটারিয়েল ফাংশন করবে এবং সেক্রেটারিয়েট ঢাকাতে হবে। সেজন্য এটা অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। এটা আইন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে দিয়েছে।
বিমসটেক সনদ স্বাক্ষর করার ফলে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটা বাণিজ্যিক অঞ্চল গঠন করা সম্ভব হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা বড় উন্নয়ন সাধিত হবে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে সরাসরি ট্রাক বা অন্য মাধ্যমে মালামাল আনা নেয়া করা যাবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে বড় জিনিস হলো- বঙ্গোপসাগরের যে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অন্য খনিজ সম্পদ আছে সেগুলো সম্মিলিতভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ॥ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ কথা জানান।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওটা আলোচনা হয়েছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, ডেফিনিটলি আমরা তো যুদ্ধের পক্ষে কোন কথা বলিনি। এটা আলোচনা হয়েছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এটা একটু পর্যবেক্ষণ করার জন্য আরও দু-একদিন লাগবে।
তিনি আরও বলেন, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় আমাদের যারা রাষ্ট্রদূত আছেন, তারা ইতোমধ্যে দেখছেন, সেখানে কী হচ্ছে, ওখানে বাংলাদেশীদের কী অবস্থা, তারা আমাদের জানাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।
আইএলও’র কনভেনশন অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন ॥ শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করার সর্বনিম্ন বয়স সংক্রান্ত আইএলও’র কনভেনশন অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘আইএলও কনভেনশন-১৩৮’ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর আগে আইএলওর ৭টা কনভেনশন আমরা সই করেছি। ৭টা মৌলিক কনভেনশন। এছাড়া আরও সহযোগী ৩৫টা কনভেনশনও সই করেছে বাংলাদেশ। এখানে ১৩৮ নম্বর যেই কনভেনশনটা এটা একটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটা ১৮৯টা দেশের মধ্যে ১৭৩টা দেশ সই করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে তিনটা জিনিস আছে। একটা হলো- বেসিক এডুকেশন করতে ১৫ বছর লাগে সুতরাং ১৫ বছরের কম বয়সী কাউকে কাজে লাগানো যাবে না। দুই নম্বরে আরেকটু রিল্যাক্স করেছে, কোন দেশের যদি আর্থসামাজিক অবস্থা বিশেষ বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে বয়স তারা কমাতে চায় তাহলে ১৪ বছর পর্যন্ত কমানো যাবে, এর ওপর না। তিন নম্বরে বলেছে এই যে, ১৪ হোক বা ১৫ হোক এ শিশুদেও কোন অবস্থাতেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না। যেসব কাজে তাদের দুর্ঘটনা ঘটার বা জীবননাশের শঙ্কা আছে, সেসব কাজে কোনভাবেই এসব শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আরেকটা বিষয় হলো ১৪ বছর বয়সে তাদের কাজে লাগানো যাবে। তবে যে এতে সে সাবালক হয়েছে তা বিবেচনায় নেয়া যাবে না। কোন অবস্থায় এটা তার বিয়ের বয়স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় সে সাবালক হিসেবে বিবেচিত হবে না। মামলা- মোকদ্দমায় যদি সে পড়ে তাহলে তাকে শিশু অপরাধী হিসেবেই তাকে গণ্য করতে হবে।
হালাল পণ্য-ফ্রিল্যান্সিং অন্তর্ভুক্ত করে নতুন রফতানি নীতি ॥ হালাল পণ্য, ফ্রিল্যান্সিং, করোনার প্রেক্ষাপটে মেডিক্যাল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘রফতানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪’, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটার উদ্যোক্তা। আমাদের রফতানি খাতে চাহিদা ও বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের জন্য তিন বছর পর পর রফতানি নীতি পরিবর্তন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এটা আনা হয়েছে। ‘ডব্লিউটিও’র (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য সেবা বহুমুখীকরণে অগ্রাধিকারমূলক পণ্য সেবা খাত চিহ্নিতকরণ, রফতানি শিল্পের পশ্চাৎ ও অগ্র সংযোজন শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা, শ্রমনির্ভর রফতানি খাতে গুরুত্ব প্রদান করা, দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ সহজীকরণে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের প্রতি রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ এ বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পার্টিকুলারলি গ্র্যাজুয়েশনের (স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর) বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লøবে (ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশনে) দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। তারপর ২০২৬ এবং আরও তিন বছরের ‘গ্রেস পিরিয়ড’সহ ইইউতে আমরা যে ‘গ্রেস’ পাব তা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসিকে’ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের এ্যাম্বাসেডর যারা আছেন, তারা কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রচার, এক্সপোর্ট-ইমপোর্টে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি টপিক আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কীভাবে আরও বেশি বিদেশী ফান্ড আনা যায়, কীভাবে এক্সপোর্ট বৃদ্ধি করা যায় তা রাখা হয়েছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে কিছু সম্ভাবনাময় নতুন খাত যেমন কৃত্রিম ফাইবার, হালাল পণ্য ও ফ্যাশন, মেডিক্যাল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী যেমন পিপিই, এটাতো আগে ছিল না। তারপর ফ্রিল্যান্সিং খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সব খাত যেন সুবিধা পায়, নীতি আদেশে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রফতানিতে সম্পৃক্ত করতে সুনির্দিষ্ট নীতি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহজীকরণে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আমরা যেন সব মালপত্র দেশের বাইরে পাঠিয়ে না দেই। যেমন একটি উদাহরণ হচ্ছে- তুরস্ক, আমাদের কাছ থেকে কাঁচা পাট নিয়ে যায়। তারা আবার পণ্য বানিয়ে ইউরোপের বাজারে দেয়। আমরা অবশ্যই কাঁচা পাট রফতানি করব কিন্তু পাশাপাশি তৈরি পণ্য যদি করতে পারি তাহলে বেশি আয় হয়। এগুলোর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কিছু বিধিবিধান এখানে আনা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রফতানি পণ্য নিষিদ্ধ তালিকাও হালনাগাদ করা হয়েছে। আরেকটি বিষয় তিন থেকে চারমাস পর কমার্স সেক্রেটারির তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে রফতানি নীতি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজন হলে আধুনিকায়ন করা হবে।
নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়েও হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ॥ নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এজন্য দুটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়-নওগাঁ আইন, ২০২২’ এবং ‘ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
বিএসডি/ এফএস