নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বার্ষিক সাধারণ সভা মানে সাধারণ সদস্যদের অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বার্ষিক সাধারণ সভার চর্চা কম। সেই সভাগুলো যদি হয় নির্বাচনের আগে তাহলে অনেক সময় হয় তুমুল হট্টগোল ও সমালোচনা। আর নির্বাচনের পর হলে অনেকটা ‘পাস, পাস ’ বলে যত দ্রুত সভা শেষ করা যায়।
ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের মনের খেলা ফুটবল। সেই ফুটবলে নেই সাফল্য। আছে অনেক সংকট। আজ (শনিবার) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁতে হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভায় ফুটবল নিয়ে গঠনমূলক তেমন কিছুই আলোচনা হয়নি।
নির্বাহী কমিটি নিয়ম মোতাবেক শোক প্রস্তাব, অডিট রিপোর্ট উত্থাপন, সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর সাধারণ সদস্যদের উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগ ছিল। আজ ১২০ জনের অধিক বাফুফের অধিভুক্ত সংস্থার প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে কথা বলেছেন জন পাঁচেক।
ফুটবল ও ফেডারেশনের গঠনমূলক আলোচনা প্রস্তাবনার চেয়ে নির্বাহী কমিটির স্তুতিই বেশি প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিশেষ করে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু যিনি এক বছর আগে নির্বাচনে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কট্টর বিরোধী ছিলেন। সেই মিকুও আজ প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন বর্তমান কমিটিকে। নির্বাচন আসন্ন হলে দেখা যাবে তারাই আবার প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সালাউদ্দিনদের।
মিকুর মতোই ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালক ও বাফুফের এজিএমে শেখ রাসেলের প্রতিনিধি সালেহ জামান সেলিম, জেলা পর্যায়ের কিছু দাবি-দাওয়া কথা বলেছেন সুদেব, ঝন্টু। আজকে ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন অনেক তারকা ফুটবলারও। তারাও ছিলেন নিশ্চুপ। জাতীয় দলের ক্রমাগত ব্যর্থতা, ঘরোয়া ফুটবলে তৃতীয় বিভাগ ফুটবল বিলুপ্তসহ নানা বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও মতামত প্রদানের সর্বোচ্চ মঞ্চ ছিল আজ। এই ব্যাপারে কেউ কোনো বক্তব্যই রাখেননি।
ফুটবলের বড় সংকট আর্থিক। বিশেষ করে দেশের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা খুবই কম। এই পরিস্থিতিতে ১৭ কোটি টাকার অধিক ঘাটতি বাজেট আজকের এজিএমে সর্বসম্মতি ক্রমে পাশ হয়েছে কোনো মন্তব্য-প্রশ্ন ছাড়াই।
নির্বাচন আসলে কাউন্সিলরদের সামনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুঁরি দেয়া হয়। গত বছর নির্বাচনের সময় সালাহউদ্দিনের প্যানেল অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এক বছর পর আজ সুযোগ ছিল কাউন্সিলরদের সেই বিষয়ে জবাব নেওয়ার। তারা উল্টো পাস পাস বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন চলেছিল অ্যাডহক ভিত্তিতে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের গঠনের পর ক্রীড়াঙ্গনেও গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রথা শুরু করে। ১৯৯৮ সাল থেকে ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচন শুরু হয়। এখন দেশের অনেক ফেডারেশনে নির্বাচন অনেকটা নিয়মিত হলেও বার্ষিক সাধারণ সভা অনিয়মিত।
বাফুফে গত ১৩ বছরে মাত্র ৪ বার বার্ষিক সাধারণ সভা করেছে। এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটি প্রতি বছর এজিএম আয়োজেনর ব্যাপারে আন্তরিক। গত বছর অক্টোবরে ২০২০ সালে নির্বাচনী এজিএম ছিল। এক বছর পর এবার অক্টোবরেই প্রথম এজিএম হলো। আগামী বছরও এর ধারাবাহিকতা থাকবে।’
এবার এই এজিএমের মূলত উদ্যোগ ছিল ফিফার নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা কমানোর সুপারিশের জন্য। গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটি হলেও আজকের এজিএমে এই বিষয় আলোচ্যসূচিতে ছিল না।
বিএসডি / আইকে