রিয়ালের সঙ্গে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি করেছেন কামাভিঙ্গা। ফরাসি ফুটবলের উঠতি প্রতিভা হিসেবে খ্যাতি কুড়োনো এ ফুটবলারের জন্ম অ্যাঙ্গোলার কাবিন্দা প্রদেশের এক শরণার্থীশিবিরে। দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণে ২০০৩ সালে ফ্রান্সে চলে আসে কামাভিঙ্গার পরিবার।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় এ ফুটবলারের শৈশব মোটেও রঙিন ছিল না। শৈশবে বেশ কিছুদিন জুডোর কসরত করেছেন। কিন্তু বাসায় জিনিসপত্র ভাঙচুরের কারণে তাঁর পরিবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাঁর বাবা কেলেস্তিনো তাঁকে নিয়ে যান স্থানীয় এক ফুটবল ক্লাবে।
সাত বছর বয়সে ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে কামাভিঙ্গার। নিজের চেয়ে বেশি বয়সী ফুটবলারদের সঙ্গে খেলার অভ্যাস গড়ে ওঠে তাঁর। ১১ বছর বয়সে রেঁনের বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পান। সে বছরই ভয়াবহ এক ঘটনায় কামাভিঙ্গার স্বপ্ন আরেকটু হলেই ধুলিসাৎ হয়ে যেত। একদিকে যখন কামাভিঙ্গার রেঁনে-তে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছিল অন্যদিকে ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে তাঁর বাড়ি পুড়ে যায়।
সে সময় কামাভিঙ্গার পরিবারের সম্বল বলতে কিছুই ছিল না। মৌলিক চাহিদাটুকু মেটাতে কামাভিঙ্গার পরিবারের জন্য চ্যারিটি ম্যাচের আয়োজন করেছিল রেঁনে।
কামাভিঙ্গার ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁকে অনুশীলন করিয়েছিলেন নিকোলাস মার্তিনাইস। এখন তিনি কামাভিঙ্গার একরকম পারিবারিক সদস্যই বনে গেছেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’য় সে সময়ের ঘটনা স্মরণ করলেন মার্তিনাইস, ‘তারা সবকিছু হারিয়েছিল। বাড়িটা পরিণত হয়েছিল কান্নার সমুদ্রে।’ কামাভিঙ্গা জানান, ‘তখন আমাকে অনুশীলনে যেতেই হয়েছিল। ফুটবল সবকিছু সহজ করে দেয়। এটা ছিল সে ঘটনা থেকে (মানসিকভাবে) সরে আসার অবলম্বন।’
কামাভিঙ্গা এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণাটা পেয়েছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। গত বছর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা, ‘চিন্তা করো না, তুমি একদিন অসাধারণ ফুটবলার হবে, এই বাড়ি তুমি নতুন করে তৈরি করবে।’
বাবার বলা এই কথা বাস্তবে অনূদিত করতে শুরুতে একটু সময় লেগেছে কামাভিঙ্গার। বাড়ি পুড়ে যাওয়ায় প্রয়াজনীয় সব কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছিল তাঁর পরিবার। এ কারণে রেঁনে-তে যোগ দিতে আর ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেতে বেশ কিছুদিন দেরি হয় কামাভিঙ্গার পরিবারের।
বাবার বলা সেই কথাগুলো স্মরণ করলেন কামাভিঙ্গা, ‘এটা সত্য যে তিনি আমাকে বলেছিলেন, এই বাড়ি তুমি নতুন করে তৈরি করবে। কারণ তুমি এই পরিবারের আশা। পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সহজ কোনো ব্যাপার নয়। শুরুতে কথাগুলো শুনে পুলক জাগলেও পরে বুঝতে পেরেছি আমার পরিবার সত্যিই তেমন মনে করে। আমি ফুটবলে অনেক দূর যেতে পারব এই বিশ্বাস ছিল তাদের।’
আগুন লাগার সেই ঘটনা ভুলতে পারেননি কামাভিঙ্গা, ‘মনে হয় এ তো সেদিনের ঘটনা! আমি স্কুলে ছিলাম। অগ্নিনির্বাপককর্মীদের জানালার পাশ দিয়ে যেতে দেখেছি। পরে স্যার এসে ঘটনাটা জানান আমার ছোট বোন এবং আমাকে। বাবা এসে আমাদের নিয়ে যান। গিয়ে দেখি আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, সব পুড়ে গেছে।’
কামাভিঙ্গার গায়ে এখন উঠবে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি। সেই পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন এখন পাখা মেলে ওড়া বাকি।
বিএসডি/এএ