নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে দ্বিতীয় দিনের মতো বিচারকাজ পরিচালিত হয়নি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে। নিয়মিত মামলার শুনানির জন্য বিচারক এজলাসে উঠলেও আইনজীবীদের বাধার মুখে আধা ঘণ্টা পরই নেমে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারক। এ সময় আদালত চত্বরে নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে আইনজীবীরা নিয়মিত মামলার শুনানি করছিলেন। এরই মাঝে ঢাকা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান দীপুর নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিচারকাজ পরিচালনায় বাধা দেন। তারা বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কি পুলিশ দিয়ে কোর্ট চালাবেন? আপনার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি। আপনি চলে যান। হট্টগোলের এক পর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি খাস কামরায় অবস্থান করছেন। উল্লেখ থাকে এক আসামিকে জামিন না দেওয়ায় এ ঘটনার সূত্রপাত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেই আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান দীপু বলেন, আমার নেতৃত্বে আন্দোলন হয়নি। সাধারণ আইনজীবীরা সেই বিচারকের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে তার অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করেছে। তিনি সবাইকে তার অধীনস্হ মনে করেন।
বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ এখনও দেওয়া হয়নি। তবে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা বারের নেতাদের কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনও পদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোনও পদ নেই।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তারা ধরেননি।
এর আগে গত রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের সামনে বিচারককে অপসারণ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। এ সময় বিচারক খাস কামরায় অবস্থান করেন, তবে এজলাসে ওঠেননি। ওইদিন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মিরাজ উদ্দিন শিকদার জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে এক আসামির জামিন নামঞ্জুর করায় উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ ঝাড়েন। এ সময় বিচারক এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। আজ আইনজীবীরা বিক্ষোভ করায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি এজলাসে ওঠেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্টাফরা জানান, ওই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে কারাগারে পাঠানো হয়। সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও তার জামিন চাইলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় উন্মুক্ত এজলাসে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
এদিকে আন্দোলনরত আইনজীবীরা জানান, এই বিচারক নিয়মিত আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। একজন বিচারকের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। প্রতিনিয়ত তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। এজন্য আমরা তার অপসারণ চাই।