বর্তমান সময় ডেস্ক:
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশে গত ১৩ বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। আর এ সময়ে নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে তিনগুণ, যা মধ্যম আয়ের মানুষের বেড়েছে কমপক্ষে দ্বিগুণ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২২ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজে যদি সমালোচনা না থাকে, যদি বিকল্প না থাকে তাহলে সমাজ তো এগিয়ে যাবে না। সেজন্য অবশ্যই সমালোচনা হবে, তবে সমালোচনার পাশাপাশি দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে; সেই এগিয়ে যাওয়ার কথাও জনগণকে জানাতে হবে। ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০১৮’-এর কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের দ্বিমত রয়েছে, এ ধরনের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংশোধন করা হবে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করছে না। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে সর্বশেষ নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর করতে হবে। মালিকপক্ষ আদালত থেকে যে আদেশ এনে ওয়েজবোর্ড দিচ্ছে না, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেন সেটা দ্রুত কার্যকর হয়।
যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আশার কথা হলো, দেশে আজ অনেক সংবাদপত্র ও টেলিভিশন হয়েছে। আরও আসছে। সাংবাদিকদের সংখ্যা এখন সুর্নিদিষ্টভাবে বলা খুব কঠিন। ডিইউজে নির্বাচন ঘিরে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনেক রঙিন পোস্টার ও লিফলেট দেখলাম। এটা হয়তো আনন্দের একটা বার্তা আমাদের দেয়। নতুন সদস্য পদের জন্য নাকি চার শতাধিক আবেদন রয়েছে। এটাও একটা বার্তা দেয়। কিন্তু বিপরীত চিত্রের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে একটা করুণ চিত্র সামনে ফুটে ওঠে। দেশের সব সাংবাদিক ভালো আছে, এ কথা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যাবে না। আমরা কিছু সাংবাদিক হয়তো ভালো আছি। কিন্তু বাকিরা ভালো নেই। যখন কেউ অসুস্থ হয়, মারা যায় বা চাকরিচ্যুত হয়, তখন আমরা এটা বুঝতে পারি।
সাইফুল আলম বলেন, হাবিবুর রহমান মিলন, আলতাফ মাহমুদ, আক্তার আহমেদ, ওয়াহেদ মুরাদসহ প্রয়াত সিনিয়র সাংবাদিকদের তৈরি পথেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমি মনে করি, গণমাধ্যমের এ সম্প্রসারণের সময়ে নতুন নেতৃত্ব আমাদের রুটি-রুজির সংগ্রামকে আরও শানিত করবে। আমাদের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করার যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ আরও তীব্র হবে। যখন কামিয়াব হব তখনই কেবল বলতে পারব- আমরা একটা জায়গায় পৌঁছেছি। বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবে চলছে। আমরা সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকব।
বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আগামী দিনের নির্বাচনে আপনারা যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। যার পেশাদারিত্ব আছে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভালো নেতা হতে পারবেন। যার পেশাদারিত্ব নেই, যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন না তারা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসলে সাংবাদিকদের অধিকার ও দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে পারবে না। তাই আগামী নির্বাচনে আপনারা যোগ্য, ভালো ও পেশাজীবী সাংবাদিকদের নির্বাচিত করবেন।
বিশেষ অতিথি বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্ব হচ্ছে সাংবাদিকদের রুটি-রুজির অধিকার নিশ্চিত করা। নিয়োগপত্র পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আরেকটি দায়িত্ব হচ্ছে মর্যাদা নিশ্চিত করা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংবাদিকদের অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অবিচল থাকবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মুনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব দীপ আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে’র সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক জাকারিয়া কাজল, রফিকুল ইসলাম রতন, আতিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, দপ্তর সম্পাদক সেবিকা রানী প্রমুখ।
সকাল ১১টায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, সিনিয়র সাংবাদিক ও ডিইউজে’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে খাওয়ার বিরতির পরে দ্বিতীয় অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে।
বিএসডি/ এফএস