নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি নাম জমা না দিলেও সার্চ কমিটি যে নাম পেয়েছে, তাতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
মঙ্গলবার সিলেট সার্কিট হাউসে সিলেট অঞ্চলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নাম জমা না দিলেও সার্চ কমিটিতে যে নাম এসেছে, তাতে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সার্চ কমিটি এমন যোগ্য ব্যক্তিদের নাম জমা দিবে, যেখান থেকে আমরা শক্তিশালী নির্বচান কমিশন পাব। যে কমিশন জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী, দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন পরিচালনা করবে, যা বিশ্বে প্রশংসিত হবে।’
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ‘নির্বাচন বর্জন করে, আন্দোলন করে বিএনপি তাদের (নিজেদের) ক্ষতি করেছে, জাতির ক্ষতি করেছে। যে কোনো বিষয়ে আলোচনা-সংলাপের বিকল্প নেই। ইউক্রেন নিয়ে এত উত্তেজনার মধ্যেও পুতিন ও বাইডেন কথা বলেছেন। আর বিএনপি সংলাপ-আলোচনা বর্জন করে যাচ্ছে, যা অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণ।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিলেট অঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে ও বিশাল পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সিলেটের হাওর, টিলা ও সমতলে কৃষির সম্ভাবনা অনেক। অনেক জমিও পতিত থাকে। এসব পতিত জমিকে কীভাবে চাষের আওতায় আনা যায়, টিলাতে কীভাবে কমলা, জাম্বুরা, কফি, কাজুবাদামসহ ফলের চাষ করা যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে। বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে ২২৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সিলেটের কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে।
মন্ত্রী বলেন, চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেজন্য, আমরা চালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের কৃষি জমি ক্রমশ কমছে, অন্যদিকে সমতল/অনুকূল পরিবেশের জমির সম্ভাবনাকে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি। এ অবস্থায় চালের উৎপাদন বাড়াতে আমরা পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে ও পতিত জমি কাজে লাগাতে কাজ করছি। এসব এলাকা ব্যবহার করে আমরা ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করে খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকতে চাই।
সভায় সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সিলেট অঞ্চলের ডিএইর অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সিলেট অঞ্চলের/বিভাগের কৃষির সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে উপস্থাপনা করেন উপ-পরিচালক কাজী মজিবুর রহমান।
উপস্থাপনায় জানানো হয়, সিলেট অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ হেক্টর। চাষযোগ্য বা ফসলি জমি রয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে এক ফসলি জমিই অর্ধেক, ৪৯%। ফসলের নিবিড়তা ১৬০%, যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় সবচেয়ে কম। অন্যদিকে পতিত জমি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯৯ হেক্টর। এ বিশাল পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনই এখন চ্যালেঞ্জ।
জমি পতিত থাকার অন্যতম কারণ হলো অনুপস্থিত কৃষক বা মালিক। সিলেট অঞ্চলে ১৮% কৃষক ভূমিহীন ও ৩৬% প্রান্তিক। প্রবাসী কৃষকেরা চাষে আগ্রহী নয়। এ ছাড়া, বোরো মৌসুমে সেচের অপর্যাপ্ততা, পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রণের উপস্থিতি, আগাম ও আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ি ঢল-অতিবৃষ্টি, টেকসই ফসল রক্ষা বাঁধের অভাব, আগাম- স্বল্পমেয়াদী জাত প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে।