নিজস্ব প্রতিবেদক
বিগত সরকারের সময়ে গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে রাষ্ট্র দখল করতে, নানাভাবে সুবিধা আদায় করতে, নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করতে এবং বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন দখল করতে দেখেছি বলে মন্তব্য করেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিআইসিসির কার্নিভ্যাল হলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি-২০২৪ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় অধিবেশনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সেলিম রায়হান বলেন, আমরা দেখেছি একই গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপি। একই গ্রুপ আবার করখেলাপি। ওই গ্রুপেই নানাভাবে টাকা পাচার করছে। এই আন্তঃসংযোগটা একদম নতুন। আমরা ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের আধিপত্য দেখেছি, বড় ব্যবসায়ীদের দেখেছি রাষ্ট্র দখল করতে। যারা নানাভাবে সুবিধা আদায় করেছে, নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করেছে। একই সময়ে তারা বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের লিডারশিপও দখল করে নিয়েছিল। যখনই কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তখনই তারা বাধা দিয়েছে।
তিনি বলেন, পরপর তিনটি অসম্ভব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনগুলোকে (গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান) ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনোরকমের জবাবদিহিতা বা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা দেখা যায়নি। গত দেড় দশক ধরে রাজনৈতিক অর্থনীতির সমস্যাগুলো দেখছি। তবে এটা গত ৫ দশকের অধিক সময় ধরেই ছিল। দেড় দশকে সমস্যাগুলো অনেক জটিল হয়েছে, অনেক গভীর হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সরকারের প্রত্যেক কর্মকর্তার মধ্যে স্বৈরাচারীর মনোভাব রয়েছে। কেননা তাদেরকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যার কারণে তারা এসব কাজ করতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তো অস্থায়ী সরকার। তাদের কাছ থেকে খুব বেশি এক্সপেক্ট করতে পারি না। কিন্তু কিছু পরিবর্তনের সূচনা আমরা আশা করতে পারি না। গত সরকারের সময় অর্থ লুণ্ঠনের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। কোনো কিছু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়, উপরের আদেশে হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় সরকারের খুব শক্তিশালী অবস্থান দেখছি না।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিগত সরকারের চৌর্যভিত্তিক প্রকল্প ছিল, মানুষের কল্যাণে কাজ হয়নি। পাচার টাকা ফেরত আনলে শাস্তি কম দেওয়া হবে এমন কিছু করা যায়। সঠিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা না বলায় বর্তমান সরকারের কাজে গতি নেই।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, আমলা ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার মতো শক্তি কী সরকারের আছে? আর তা করতে হলে কী করা দরকার তা নিয়ে কাজ করতে হবে। যেসব দেশ পাচারের টাকা ফিরিয়ে এনেছে তাদের পলিসিগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৭টি মেগা প্রজেক্ট রিভিউ করতে গিয়ে দেখা গেছে, ১৮ হাজার টাকার বাজেট ১৮ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। এসব প্রজেক্ট ঋণের টাকায় করা হয়েছে। এসবের ঋণের চাপ আমাদের ও আগামী প্রজন্মের ওপর পড়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন চ্যানেলে এসব টাকা পাচার হয়েছে। সেগুলো কীভাবে ফেরত আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিদেশের যেসব টাকা দেশে ঢুকেছিল তা ফেরত নেওয়া হয়েছে সেই আলোকে আমরাও ফেরত আনতে পারব।