স্পোর্টস ডেস্ক:
লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার সঙ্গে যেন চলে গিয়েছিল ন্যু ক্যাম্পের প্রাণটাও। সে প্রাণটা ফিরল অবশেষে ঘরের ছেলে জাভির কোচ হয়ে ফেরার পর। গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা ‘জাভি, জাভি, জাভি’ রবে মাতিয়ে রাখলেন গ্যালারি।
সমর্থকদের এমন উচ্ছ্বাসটা বার্সেলোনাও মিইয়ে যেতে দেয়নি। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলকে ১-০ গোলে হারিয়ে জিতেছে কাতালান ডার্বি। যদিও এ জয়ে মিশে আছে কিছুটা বিতর্কও। পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে জিতেছে বার্সা। বিতর্ক উঠেছে এ নিয়েই।
ম্যাচের আগে বার্সেলোনা টানা চার ম্যাচ জয়শূন্য ছিল। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারের পর রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষেও হেরেছিল কাতালানরা। যে হারে চাকরি চলে গিয়েছিল রোনাল্ড কোম্যানের। এরপরের দুই ম্যাচে অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন কোচ সার্জি বেরহুয়ানের অধীনে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিল দলটি। তবে দুটো ম্যাচেই ড্র করেছিল, জয় আর পাওয়া হয়নি। সে বৃত্ত থেকেই বার্সা বেরিয়ে এসেছে এবার।
জাভি আসায় যেন বার্সেলোনায় যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তনই এসেছে। আগের ম্যাচে যেখানে এসেছিলেন মাত্র ৩৭ হাজার দর্শক, যেখানে গতকাল রাতে বার্সার ডেরায় হাজির ছিলেন ৭৪ হাজারের বেশি দর্শক। শুরু থেকেই নতুন কোচের নাম ধরে চিৎকারে কান পাতা দায় ছিল ন্যু ক্যাম্পে।
পরিবর্তন এসেছিল আরও একটা। বার্সেলোনার শুরুর একাদশে এদিন সুযোগ পেয়েছিলেন লা মাসিয়ার ৮ ফুটবলার। রক্ষণে জেরার্ড পিকে, এরিক গার্সিয়া, জর্দি আলবা, অস্কার মিনগেসাদের সবাই ছিলেন লা মাসিয়ার। মাঝমাঠে সার্জিও বুসকেটসের সঙ্গে নিকো গঞ্জালেস, আর আক্রমণে পাবলো গাভির সঙ্গে অভিষিক্ত ইলিয়াস আখোমাচ ছিলেন বার্সা একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়।
ছাপটাও দেখা গেল ম্যাচে। ৬৫ শতাংশ বলের দখল। প্রতিপক্ষ গোলমুখে ১৬টা শট, যার ৬টা ছিল লক্ষ্যে। ছিল আক্রমণাত্মক ফুটবল, যার ফলে শুরু থেকেই এস্পানিওলকে ব্যতিব্যস্ত রাখছিল বার্সা।
প্রথম সুযোগটা আসে চতুর্থ মিনিটে। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের লং বল থেকে মেমফিস ডিপাইয়ের শট কোনোক্রমে ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজ। ১৫তম মিনিটে সেই লোপেজ বড় এক ভুলই করে বসেছিলেন। বল তুলে দিয়েছিলেন গাভির পায়ে। কিন্তু সেটাতে শট নেওয়ার আগেই এস্পানিওল রক্ষণের চ্যালেঞ্জে মাটিতে পড়ে যান তিনি। পেনাল্টির আবেদনে অবশ্য সাড়া পায়নি দলটি।
আধঘণ্টা পেরোনোর আগে আরও দুটো সুযোগ পেয়েছিল বার্সা, যদিও এস্পানিওল গোলরক্ষকের কল্যাণে গোল আর পাওয়া হয়নি দলটির। বরং বিরতির আগে বিপদেই পড়ে যাচ্ছিল জাভির দল। গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনের কল্যাণে সে যাত্রায় রক্ষা পায় বার্সেলোনা।
গোলশূন্যভাবে বিরতিতে যায় দুই দল। বিরতির পরই অবশ্য গোল পায় বার্সেলোনা। ৪৮ মিনিটে এস্পানিওল বিপদসীমায় ফাউলের শিকার হন মেমফিস। উরুগুইয়ান ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জে পড়ে যান, সেখান থেকে পেনাল্টি থেকে গোলটাও করেন তিনিই।
সে চ্যালেঞ্জ ‘ফাউল’ ছিল কিনা, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। ম্যাচ শেষে এস্পানিওল আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে ডিফেন্ডার লিয়ান্দ্রো কারবেরাই প্রথম বলে পা ছুঁইয়েছিলেন, যে কারণে এ পেনাল্টি বৈধ ছিল না আদৌ।
তবে তাতে বার্সেলোনার কোনো ক্ষতি হয়নি, পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে জয়টা তো তুলে নেওয়া গেছে! ৬৫ মিনিটে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং আরও একবার লক্ষ্যভেদ করেছিলেন। যদিও তা অফসাইডের খড়গে বাতিল হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর সফরকারী দলের স্ট্রাইকার রাউল ডি টমাসের চেষ্টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোল আর পায়নি দলটি।
৮২ মিনিটে সেই টমাসের ফ্রি কিক প্রতিহত হয় বারে। এর কিছু পরেও তার আরও এক চেষ্টা সেই একই পরিণতি পায়। ফলে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া নিয়েই প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নেয় জাভির বার্সেলোনা।
এই জয়ের ফলে ১৩ ম্যাচ শেষে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ছয়ে উঠে এসেছে বার্সা। ২ ম্যাচ কম খেলে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে এস্পানিওল অবশ্য আছে তালিকার ১১তম অবস্থানে।
লা লিগার শীর্ষে থাকা সেভিয়া সমান ম্যাচ থেকে ২৮ পয়েন্ট অর্জন করেছে। সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে দুইয়ে আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ। রিয়াল মাদ্রিদ অর্জন করেছেন ১ পয়েন্ট কম, ম্যাচও খেলেছে একটি কম। চার আর পাঁচে থাকা অ্যাটলেটিকো ও রিয়াল বেটিসের সংগ্রহ যথাক্রমে ২৬, ও ২১
বিএসডি/এসএসএ