নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনা সেবা (এপোস্টিল সেবা) উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিদেশগামীরা দ্রুত সত্যায়ন সেবা পাবেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেবাটি চালু করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এপোস্টিল সেবা হলো একটি সার্টিফিকেট যা এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১ এর নিয়ম মেনে কোনো পাবলিক ডকুমেন্টের সত্যায়নের সনদ হিসেবে দেওয়া হয়। এটি সেই ডকুমেন্টের উৎপত্তির সঠিকতা প্রত্যয়ন করে। এপোস্টিল সার্টিফিকেটের ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থান হতে এপোস্টিলকৃত ডকুমেন্টের উৎপত্তির সঠিকতা যাচাই করা যায়। এই কনভেনশনের পক্ষভুক্ত দেশের বর্তমান সংখ্যা ১২৭টি।
বিদেশগামী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট বা ডকুমেন্ট প্রদানকারীসহ একাধিক কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করে। সত্যায়ন শেষে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস, বিদেশ গমনের পর সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে সত্যায়ন করতে হয়। তাছাড়া যেসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই সেসব দেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সমবর্তীভাবে নিয়োজিত পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের দূতাবাস থেকে ডকুমেন্ট সত্যায়নের জন্য বাংলাদেশি সেবা প্রার্থীগণকে সেসব দেশে যেতে হয়।
ডকুমেন্টেশনের এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে নাগরিকদের অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। নাগরিকদের এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১ এ পক্ষভুক্ত হয়েছে। এপোস্টিল কনভেনশন এর পক্ষভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাবলিক ডকুমেন্টের সত্যায়নের সনদ হিসেবে এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রদান করবে এবং এই এপোস্টিল সার্টিফিকেট ব্যবহার করলে সেবাপ্রার্থীরা সময় ও অর্থ ব্যয় করে ঢাকাস্থ বিদেশি দূতাবাস এবং বিদেশে গমনের পর সেই দেশে অবস্থিত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ডকুমেন্টসমূহ আর সত্যায়ন করতে হবে না।
এছাড়া এপোস্টিল সার্টিফিকেটে বিদ্যমান কিউ আর কোড স্ক্যান করে বিশ্বের যেকোনো স্থান হতে এপোস্টিলকৃত ডকুমেন্টের উৎপত্তির সঠিকতা যাচাই করা যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বিদেশি দূতাবাসসমূহ প্রতি পাতা ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্ভিস ফি আদায় করে থাকে। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে বিদেশি দূতাবাসে সার্ভিস ফি দিয়ে ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে হবে না। এতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিবছর প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ডকুমেন্টের হার্ড কপিতে ম্যানুয়ালি সত্যায়ন করার সময় সেবা প্রার্থীগণ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দালালের খপ্পরে পড়েন। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে সব প্রকার দালাল/মধ্যস্বত্বভোগী সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে যাবে এবং জাল বা নকল সিল ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে সত্যায়ন করার প্রবণতাও কমে যাবে।
এপোস্টিল প্রোগ্রাম সম্পাদন প্রক্রিয়া:
বিদেশ গমনেচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রী ও পেশাজীবীগণ তাদের ডকুমেন্টসমূহ সত্যায়নের জন্য www.mygov.bd পোর্টালে গিয়ে এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। ডকুমেন্টটি ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ যাচাই পূর্বক সত্যায়ন সম্পন্ন করে তা নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে দেবে। নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টটি প্রতিসত্যায়ন করে অনলাইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এপোস্টিল কনভেনশনের নিয়ম মেনে ডকুমেন্টটিতে প্রতিসত্যায়ন করবে এবং সত্যায়নের সনদ হিসেবে অনলাইনে ই-এপোস্টিল (e-Apostille) সার্টিফিকেট দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবা প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নাম্বারে নোটিফিকেশন যাবে এবং সেবা প্রার্থীগণ তাদের মাইগভ পোর্টালের ব্যক্তিগত ড্যাশ বোর্ডের ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করে ই-এপোস্টিল সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আজ এপোস্টিল সেবা উদ্বোধনে খুব ভালো একটা ঘটনা ঘটলো। এটা আমাদের তরুণরা করেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। তবে সরকারের মাইগভ ওয়েবসাইট কতটুকু সিকিউর, এটা আমাদের ভাবতে হবে। এই ব্যবস্থার বিকল্প কি হতে পারে সেটাও চিন্তা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সংস্কার বিষয়ক সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।