পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রিতে কোনো মুনাফা না থাকা ও পিডিবি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির বিল থেকে উৎসে কর অব্যাহতি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগকে পরিস্থিতি জানিয়ে চিঠি দেয় পিডিবি। এতে বলা হয়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। ফলে প্রতিবছর পিডিবি লোকসান গুনছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সেবা খাত হিসেবে সরকারি নির্দেশনায় মুনাফার চিন্তা না করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। গত বছর সরকারের কাছ থেকে পিডিবি ভর্তুকি নিয়েছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি বছর তা ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পিডিবির উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বর্তমানে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এখন বাড়তি উৎসে কর দিতে হলে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে কর মওকুফের বিষয়ে এখন পর্যন্ত এনবিআর কিছু জানায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পিডিবি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এটি সরকারের ভর্তুকিতে চলে। তাই উৎসে কর কাটার বিষয়টি কীভাবে আসে! উৎসে কর কাটা হলে সেটিও সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিতে হবে।
পিডিবির দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আয় বাড়াতে এনবিআর নতুন খাত খুঁজে বের করছে। কিন্তু পিডিবির কাছ থেকে উৎসে কর নেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। বর্তমান অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ বিক্রির ওপর উৎসে কর চালু করা হয়। এ হিসেবে গত জুলাই থেকে তা আদায় হওয়ার কথা। যদিও পিডিবি তা পরিশোধ করছে না। উৎসে কর খাতে পিডিবির কাছ থেকে মাসে ১৮০ কোটি টাকা আয় করতে পারবে এনবিআর। বছরে তার পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
পিডিবি বলছে, বছরে ৭৮ হাজার ৫২৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এই বিদ্যুতের দাম প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা জ্বালানি বিল। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৬১ পয়সা খরচ হয়। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ টাকা ১২ পয়সায়। সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১ টাকা ৪৯ পয়সা। জ্বালানির খরচ কমানো গেলে লোকসান কমাতে পারত পিডিবি।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, অগ্রাধিকার খাত হিসেবে সরকার বিদ্যুৎ সেবার আওতা বাড়াচ্ছে। এখন প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় এসেছে। গত সাড়ে ১২ বছরে নতুন করে বিদ্যুৎ–সংযোগ পেয়েছেন তিন কোটির বেশি গ্রাহক। গ্রাহকদের একটি বড় অংশকে ন্যূনতম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিইআরসি সূত্র বলছে, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১০ বার। পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবুও বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এনবিআর রাজস্ব আয় বাড়াতে করের আওতা বাড়াতে পারে। যাঁরা করের আওতায় নেই, তাঁদের তারা যুক্ত করতে পারে। কিন্তু করদাতার ওপর নতুন নতুন করারোপের কোনো মানে হয় না। হঠাৎ এ বছর এমন করারোপের আইনগত দিকটিও যাচাই করে দেখা উচিত। ভর্তুকির টাকায় একই বিদ্যুৎ থেকে দুই দফায় উৎসে কর নিয়ে সরকারের লাভ কী!
পাইকারি বিদ্যুতে উৎসে কর নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, একই পণ্যে দুই দফা কর আরোপের যৌক্তিকতা যাচাই করে দেখা উচিত; তা–ও আবার বিদ্যুৎ একটি জরুরি সেবাপণ্য। এর আগে হঠকারী সিদ্ধান্তে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে অর্থনীতি ও জনজীবন আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে।
বিএসডি / এলএল