নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক গত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটের পরিমাণ প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় ক্যাব।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম. শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইঁয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শওকত আলী খান, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান বিইআরসি পূর্বের বিইআরসির ধারা বজায় রাখছে, যা দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের আচরণের মাধ্যমে বিইআরসি আইনের যে উদ্দেশ্য তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যা আগের বিইআরসি করে গেছে এখনকার বিইআরসি তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরো জাতির মধ্যে যে চেতনা তৈরি হয়েছে, বিইআরসি কর্মকাণ্ড সে চেতনার বিরোধী। আজকের বক্তব্যের পর আমরা আশা করছি বিইআরসি গণশুনানি স্থগিত করবে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে পরিমাণ লুণ্ঠনমূলক ব্যয় হয়েছে, তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি কি পরিমাণ কমানো সম্ভব তা বিইআরসিকে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব পাওয়া গেছে সে শুনানি স্থগিত করবে। এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা গণশুনানিতে যাবো এবং দাবি বাস্তবায়নে বিইআরসি যেন একাত্মতা প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ বিধান আইন এবং বিইআরসি আইনে সংযোজিত ধারা ৩৪ক বাতিল করে। তবে আইনে সংযোজিত কমিশন কর্তৃক প্রবিধান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে- এই বাক্যটি বাতিল হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণ অব্যাহত আছে।
আবার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশেষ বিধান আইন, ২০১০ বাতিল করা হলেও তাতে ২ (খ) ও ২ (গ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে ওই আইনের আওতায় যে-সব অন্যায় ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে, সে-সব কার্যক্রমকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাতে জনগণ প্রতারিত হয়েছে। ফলে বলা যায়, সরকার ও বিইআরসি’র চেতনা ও ধারণায় কোনো পরিবর্তন আসেনি, লুণ্ঠন সুরক্ষিত থেকেছে।
ক্যাব আরও বলে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ক্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংস্কার প্রস্তাবে কোনো কাজ হয়নি। বিইআরসি লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মূল্যহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারকেও কোনো পরামর্শ দেয়নি। বরং বিইআরসি কর্তৃক গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গণ-বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পেট্রোবাংলা এবং তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবন ও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহের প্রাকৃতিক গ্যাসের শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণীতে বিদ্যমান, প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য ভোক্তার গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিইআরসি দিনব্যাপি শুনানির আয়োজন করেছে। অর্থাৎ গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুতেরও শুরু করা হবে। গ্যাসে বিদ্যমান আর্থিক ঘাটতি বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান মূল্যহার ৩০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব বিইআরসি আইনের ধারা ২২ ও ধারা ৩৪ এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।