প্রযুক্তি ডেস্ক,
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেলেও বাস্তবতা হলো দেশে এখনো শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়নি। সরকারের প্রচেষ্টা আছে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরিতে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে যাতে চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে নানাভাবে বিদ্যুত যে সাশ্রয়ও করা যায় সে বিষয়টি সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়েই উপেক্ষিত থাকছে।
বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য দেশগুলো উৎপাদনের দিকে যেমন জোর দেয় তেমনি উৎপাদিত বিদ্যুতের সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের ওপরও অনেক বেশি জোর দেয়া হয়। এজন্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের বিষয়টি সবসময় আলোচনায় থাকে। অর্থাৎ অনেক কষ্টে উৎপাদিত বিদুৎ যেন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, যেন এ ক্ষেত্রে অপচয় না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়।
কোনো দেশে বা শহরে এক কিলোয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ যদি কেউ অপচয় করে তবে অন্যভাবে এর মানে দাঁড়াবে সেই দেশ বা শহর এক কিলোয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ কম পেল।
দেশে দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি প্রযুক্তিরও সহায়তা নেয়া শুরু হয়েছে। উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন নতুন পণ্যের। যেগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে উল্লেখযোগ্য হারে। বাংলাদেশেও এসব প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যেমন নির্দিষ্ট একটি নিয়ন্ত্রক পণ্য আছে যেটি বাড়ির সিঁড়িতে ব্যবহার করলে সিঁড়ির জন্য দৈনন্দিন ব্যহৃত বিদ্যুতের অর্ধেক ব্যয় কমে যাবে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী সিঁড়িতে এলেই কেবল লাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে, অন্য সময় বন্ধ থাকবে। তাহলে সারাদিন বা সারা রাত আর সিঁড়িতে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে না।
সিঁড়িতে ব্যবহার করা যায় এমন পণ্যের নাম মোশন সেনসর, এটির দামও হাতের নাগালে। একেকটি স্ট্যান্ড এলোন মোশন সেনসর পাওয়া যায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে।
নতুন প্রযুক্তির পণ্যের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এমন সুযোগ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী ভাবছে- জানতে চাইলে এই খাতের ব্যবসায়ী ‘পাওয়ার জেনারেশন টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শেখ মোহাম্মদ নুরনবী জানান, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও পণ্যের ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে বিষয়টির ওপর এখনো তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে বহু কোম্পানি নিজেদের উদ্যোগে এসব প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন। তবে এখনো এসব নতুন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রচার পায়নি। ফলে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে খুব কম জানেন। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টিতে আরও বেশি জোর দেয়া’।
কীভাবে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে তার একটি উদাহরণ দেন শেখ নুরনবী।
তিনি বলেন, দিনের বেলা বড় বড় কর্পোরেট হাউজের বহুতল ভবনগুলোতে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হওয়ায় প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। সম্প্রতি একটা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে যেটি ব্যবহার করলে দিনের বেলায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করা থেকে বাঁচা যাবে।
এখানে ‘ডে লাইট হারভেস্টিং’ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এই পদ্ধতিতে লাক্স লেভেলকে ব্যবহার উপযোগী একটা স্ট্যান্ডার্ড মাত্রায় সেট করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যেমন, বাইরে যদি আকাশ মেঘলা থাকে ভেতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট মাত্রায় বাতির আলো বেড়ে যাবে। আবার বাইরে যদি পর্যাপ্ত আলো থাকে, ভেতরের বাতির আলো কমে যাবে। ডিমিং পদ্ধতিতে এই কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে। ব্যবহারকারী জানতেই পারবে না আলোর স্বল্পতা অথবা অতিরিক্ত আলোর প্রখরতা।
একইভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এয়ারকন্ডিশন। নির্দিষ্ট একটা তাপমাত্রায় সেট করা থাকবে। ব্যবহারকারী কক্ষে না থাকলে এসি একটা নির্দিষ্ট সময় পর বন্ধ হয়ে যাবে আবার কক্ষে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। এ পদ্ধতির পণ্যের নাম ‘প্রেজেনস ডিটেক্টর’ বা ‘ওকুপ্যানসি সেনসর’। এগুলোর একটি ইউনিটের দাম পড়বে ৪৫০০-৫০০০ টাকা।
এভাবে আরও বেশকিছু নতুন প্রযুক্তি বের হয়েছে যেগুলো ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রচুর সাশ্রয়ী হওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে পারলে ব্যক্তি যেমন লাভবান হবে তেমনি সামগ্রিকভাবে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাবে।
ঢাকার নবাবপুরের কিছু বৈদ্যুতিক পণ্যের দোকানে এসব পণ্য পাওয়া যায়। কিছু কিছু প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের প্রতিষ্ঠান অনলাইনেও এসব পণ্য বিক্রি করে। ভাল মানের পণ্য নিতে চাইলে ভালো ব্র্যান্ড-এর নেওয়া যায়। কিছু ব্র্যান্ড বেশ নির্ভরযোগ্য, যেমন- স্নাইডার ইলেক্ট্রিক, ফিলিপস, উইপ্রো, সিকোরিকো ইত্যাদি।
বিএসডি/আইপি