নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করছে সরকার। আগামী চার বছরের মধ্যে এ টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। কিন্তু বর্তমান ভিভিআইপি টার্মিনালটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। এ সময়ে ভিভিআইপি সেবার জন্য ইনটেরিম ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অধীনে রানওয়ের পশ্চিম পাশে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ বিষয়ে বলেন, থার্ড টার্মিনালের কারণে বর্তমান ভিভিআইপি টার্মিনাল ভেঙে ফেলতে হবে। ওই সময়ে ভিভিআইপি সুবিধার জন্য ইনটেরিম ভিভিআইপি টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের জন্য ৯ হাজার ৩০২ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন। রানওয়ের পশ্চিম পাশের এলাকাটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনস্ত। ইনটেরিম ভিভিআইপি ভবন ও অন্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এই জমি বিমানবাহিনীর কাছ থেকে হস্তান্তরের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ভিভিআইপি টার্মিনাল, ভিভিআইপি অ্যাপ্রোন, কার পার্ক, রোড ইত্যাদি ভৌত অবকাঠামোর জন্য বিমানবাহিনীর জায়গাটি উপযুক্ত। বেবিচকের নিজস্ব জমি সেখানে নেই। প্রস্তাবিত ভিভিআইপি টার্মিনাল ভবন নির্মাণে এর খরচ জাইকার মাধ্যমে বহন করা হবে। শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের খাত থেকে প্রকল্প বহনের কথা বলেছে বেবিচক। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজে চার বছর সময় লাগতে পারে।
দুই বছর পর বর্তমান ভিভিআইপি টার্মিনাল ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। এর ফলে অবশিষ্ট দুই বছর শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো ভিভিআইপি সুবিধা থাকছে না। এ কারণেই ইনটেরিম ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে প্রস্তাবিত টার্মিনালটি ভিভিআইপিদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য রানওয়ের পশ্চিমে ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিমানবাহিনীর জমি চেয়ে প্রস্তাব যাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের জন্য ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প চলমান। প্রায় ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন টার্মিনালে একসঙ্গে কতগুলো ফ্লাইট বোর্ডিং ব্রিজ, ইমিগ্রেশন কতটা আধুনিক ও যানজট মোকাবিলার সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন ও ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স, ১১৫টি চেক-থার্ড টার্মিনাল ইন কাউন্টার সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে। ২০১৯ সালের শেষে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। দুই দেশের চার শতাধিক দক্ষ জনবল কাজ করছেন। প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় টার্মিনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি হবে। নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনালে কেবিন এক্স-রে মেশিন ৪০টি, বোর্ডিং ব্রিজ ১২টি, কনভেয়ার বেল্ট ১৬টি, বডি স্ক্যানার ১১টি, টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ও এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ৬৩ হাজার বর্গমিটার, রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ইকুইপমেন্ট ৪ হাজার বর্গমিটার, ভূমি উন্নয়ন, কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ২৪ হাজার বর্গমিটার, কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্য) ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ২২ হাজার বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, সোল্ডার ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার, ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রটেক্টিভ ওয়ার্কস), বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেট, গার্ডরুম ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্লান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রাখা হবে ফানেল টানেল।