গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলীয় শক্তিকে সরকার ‘আইএস’ বানানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, তাদেরকে সরকার ‘তালেবানি’ চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিরোধীদের আগুন সন্ত্রাস এবং ‘জঙ্গি’ বলছে তারা। কিন্তু এই অপচেষ্ঠা এবার সফল হবে না। ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সরকার এমন চেষ্টা অনেক করেছেন।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট (ইউএলই)।
মঈন খান বলেন, ফ্রান্সের প্যারিসে একদিনে ৬০০ গাড়ি ভাঙা হয়েছিল। তারা সরকারি চাকরির বয়স নিয়ে আন্দোলন করেছিল। তাতে কি ফ্রান্সের সরকার তাদের সন্ত্রাসী বলেছে। এর বিপরীতে ফ্রান্স সরকার বলেছে, জনগণ কেন আন্দোলন করেছে তারা সেটা উপলব্ধি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আজকে উল্টো হচ্ছে।
মঈন খান বলেন, আজকে সিএসএ হয়েছে, ডিএসএ হয়েছে, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। এই বাংলাদেশের জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। তাহলে কেন স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আমরা আজকে এই অবস্থায় উপনীত হলাম। এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এর থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তাও বিবেচনা করতে হবে। আজকের আন্দোলন সংগ্রাম হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম।
বর্তমান আন্দোলন হচ্ছে নিরস্ত্র জনগণের শক্তি বনাম রাষ্ট্রশক্তি- এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে এর জন্য কিন্তু আমরা আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি একটা পরিবর্তনের জন্য। আর সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে জনগণের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। আজকের এই আন্দোলন কিন্তু বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগের আন্দোলন না। এই আন্দোলন হচ্ছে, নিরস্ত্র জনগণের শক্তি বনাম রাষ্ট্রশক্তি। এই কঠিন সংগ্রামকে কিন্তু আমাদের উপলব্ধির মধ্যে রাখতে হবে।
৭ জানুয়ারি সরকারের বড় ধরনের পরাজয় হয়েছে এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, জনগণ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে ভোট দিতে যায়নি। আমি যদি এই ঘটনাকে বিশ্লেষণ করি তাহলে অনেকে যে বলছেন আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলেছে আর বিএনপির পরাজয় হয়েছে, এখানে আমি বলব বিএনপির কোনো পরাজয় হয়নি, সরকারের হয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মঈন খান বলেন, বাংলাদেশ থেকে রাজনীতিকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এদেশে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। রাজনীতিতে এখন একটি বিষয় কাজ করে- ক্ষমতা আর অর্থবিত্ত। দেশের রাজনীতি আজকে যে পর্যায়ে গেছে সেই পরীক্ষায় আমি পাশ করতে পারিনি। কাজেই সেই ধরনের রাজনীতিক আমি হতেও চাই না।
মতবিনিময় সভায় সরকারের সমালোচনা করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একটি দুর্গন্ধময় সরকারে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা নিজের দলকে নষ্ট করেছেন। তিনি ছলেবলে চালাকি করে একটি সরকার গঠন করেছেন। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন। বাজার ব্যবস্থা, ব্যাংক খাত এবং বিচার ব্যবস্থা ঠিক করা সম্ভব না। কারণ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে।
রাজনীতিতে পেশাজীবীদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের পেশাজীবীদের চাওয়া খুব বেশি না। আমরা শুধু নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- জাস্টিস মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ অন্যান্যরা।
বিএসডি / এলএম