আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রচুর ক্রয় আদেশ আসছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ভারত ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ঝুঁকছে বলে জানাচ্ছেন পোশাক খাতের শিল্পমালিকরা। যার প্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণের বিস্তাররোধে সরকার ঘোষিত চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কারখানা চালু রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।
এমন সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও’র এক প্রতিবেদন বলছে, বিদায়ী ২০২০ সালে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থানে আর চীন বরাবরের মতোই একক দেশ হিসেবে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে।
গত কয়েক বছর ধরেই পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজার দখলে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। যদিও এর আগেও একবার তারা বাংলাদেশের রপ্তানিকে ছাড়িয়ে যায় কিছুদিনের জন্য।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানির চিত্র উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম ২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আর বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
তার আগের বছর ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হওয়া পোশাকের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল বাংলাদেশের। গত বছর যা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যায়। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের দখলে আছে বিশ্ববাজারের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনা মহামারিতে বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি যেখানে ১৫ শতাংশ কমেছে, সেখানে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি কমেছে মাত্র ৭ শতাংশ। আর এতেই দীর্ঘদিন ধরে পোশাকের বিশ্ববাজারে একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখা বাংলাদেশ নিচে নেমে যায় প্রতিযোগিতায়।
এদিকে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীন ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তার আগের বছরের চেয়ে দেশটির পোশাক রপ্তানি ৭ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানি ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে রেখেছে চীন ।
বাংলাদেশের পরে আছে তুরস্ক, যাদের রপ্তানি করা পোশাকের মূল্য দেড় হাজার কোটি ডলার আর ভারত গতবছর এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে পঞ্চম অবস্থানে আছে। তারপরে আছে যথাক্রমে- মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, হংকং।
রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম সময় সংবাদকে বলেন, এটা হওয়ারই ছিল। কেননা গতবছর করোনা মহামারি শুরুর পর প্রায় তিন মাস তেমন একটা উৎপাদনে ছিল না দেশের পোশাক কারখানা। এখন যে অবস্থা ভিয়েতনামে চলছে। তাই বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাকের অর্ডার আসছে বেশি হারে।
তিনি আরও বলেন, রোববার (১ আগস্ট) থেকে কারখানা চালু হলে আমরা পুরোদমে রপ্তানি করতে পারবো। অনেক কারখানায় ঈদের আগে পোশাক বানানো শেষ। এখন রপ্তানির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ভিয়েতনাম কৃত্রিম সুতার দামি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে আছে। আমাদের রপ্তানি করা পোশাকের বেশিরভাগ সস্তা। তাই পরিমাণে অনেক বেশি হলেও রপ্তানিমূল্য কম। তবে আমরাও দামি কৃত্রিম সুতার পোশাক রপ্তানির চেষ্টা করছি। সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি তারা যদি বিশেষ প্রণোদনা দেয় এ ধরনের পোশাকে, তাহলে রপ্তানিতে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে। সবমিলিয়ে আশা করি, এ বছর আমরা হারানো অবস্থান ফিরে পাবো, ভিয়েতনামকে আবারো পেছনে ফেলবো।
বিএসডি/এমএম