ইমরান বিন বশির
যদি আমি বলি, এই যে দেশের আকাশজুড়ে গড়ে উঠছে অসংখ্য মসজিদ, বিশাল বিশাল আট্টালিকা, এই যে দেশের জমিনজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এত এত মাদরাসা, এসবের কোনো মানে হয়? কোন বিশ্বাস আর কোন স্রষ্টার উপাসনা আরাধনার জন্য এসব ভবনের নির্মাণ? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ বলতে কেউ নেই।
নবী মোহাম্মদ একজন ভণ্ড। পৃথিবীতে অমর হতে কাল্পনিক এক স্রষ্টার কল্পিত কিছু কথামালা মানুষকে শুনিয়ে গেছে। আশা ও ভয় দেখিয়ে গেছে কল্পিত জান্নাত জাহান্নামের। নিদেনপক্ষে এসব কিছুই নেই। সুতরাং দেশের মাটিজুড়ে গড়ে ওঠা এত মসজিদ মাদরাসার কোনো প্রয়োজন নেই।
এসব আগাছা পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তোলা হোক মদের বার। নারীর আসর। জমে উঠুক সেখানে পাশ্চাত্যের সভ্যতা। মদ, নারী, জুয়া….
তবে জানি, পোস্ট দেওয়া মাত্র আমাকে মার মার কাট কাট করে তেড়ে আসবে আল্লাহ রাসূলের প্রকৃত সৈনিকরা।
আমাকে দেখামাত্র পিষে ফেলা হবে।
ধারালো কোনো ছুরি চালিয়ে দেবে আমার উদরে। আমার মাথা কেটে ফেলে দেওয়া হতে পারে নদী, পুকুর কিংবা জঞ্জাল জলাশয়ে।
আমার খুনিদের বিচার চাইতে আসবে রাষ্টের মুষ্টিমেয় কিছু নাস্তিক ভাইয়েরা। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। এ দেশের আলেম ওলামা, রাসূলের সৈনিক, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম সকলেই আমার এই হত্যার বাহবা দেবে। খুনিকে স্বাগত জানাবে। আমার রক্তকে মূল্যহীন ঘোষণা করবে। এসব করবে তারা, যারা হয়তো রোজকার পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের কোনো এক ওয়াক্তেও হাজির হয় না। বিবাহপূর্ব প্রেম হারাম বলে বলে ঠোঁট মুখ ফেনিল করে তুললেও যারা জড়িয়ে আছে এক কিংবা একাধিক গভীর প্রেমে। সেই প্রেমে আছে হারাম স্পর্শ। আছে অশ্লীল কর্মকাণ্ড। সবকিছুই। আমার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করতে আসবে তারা যারা হয়তো আজীবন করে গেছে হারাম কোনো ব্যবসা। অবৈধ কোনো চাকরি। যা যা ইসলাম করতে বলে তার কিছুই করেনি।। যা যা ইসলাম না করতে বলে তার সব কিছুই করেছে। অথচ এরাই আসবে আমার অবিশ্বাসী পোস্টের কারণে মাথা থেকে শরীর আলাদা করে নিতে। কেন?
আমাদের মাঝে তফাৎ কোথায়? দিনশেষে আমি আর তারা তো একই। কারণটি হলো বিশ্বাস।
তারা তাদের ধর্মকে বিশ্বাস করে। আল্লাহ মোহাম্মদকে বিশ্বাস করে। কুরআনের সমস্ত কথা, বিধান শাসনকে তারা বিশ্বাস করে।
আর আমার পোস্টের মানে হলো অবিশ্বাস। তবে কি বিষয়টি এমন যে তারা যদিও তাদের ধর্মের কিচ্ছুটি মানছে না তবু স্রেফ বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে আমাকে আঘাত করছে? তার মানে এ দেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাটুকু বেশ শক্তিশালী, পোক্ত। এটা বেশ ভালো। আলহামদুলিল্লাহ্ ।
এখন আমি যদি বলি, আচ্ছা ঠিক আছে, যদি আল্লাহ, নবী মোহাম্মদ সা. জান্নাত জাহান্নাম, কুরআন সত্যিই হয়, হাদিসের সকল বাণী সত্যিই হয়, পৃথিবীজুড়ে অজস্র ধর্মের এটিই একমাত্র সত্য ধর্ম হয়, এই আকাশ, কোটি কোটি নক্ষত্ররাজি, গাছ গাছালি, নদ নদী, এই মহাবিশ্ব, এসবের স্রষ্টা যদি ইসলামের আল্লাহই হয়ে থাকেন তবে ইসলামের প্রতিটি বিধান কেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানছেন না? মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহর শাসন বিধান কেন এই দেশের সংবিধানে নেই?
কেন ক্ষুদ্র এই পৃথিবীর, তুচ্ছ এই দেশটির সংসদে বসে থাকবে কিছু আল্লাহদ্রোহী? কেন এই দেশ স্রষ্টার বিধান অনুযায়ী পরিচালিত না হয়ে পরিচালিত হবে তুচ্ছ এক সৃষ্টি মানবরচিত বিধানে? কেন? এই মহাবিশ্বের প্রকৃত মালিক তো আল্লাহই। তবে কেন রাজত্ব নেই, শাসন নেই, সংবিধান নেই আল্লাহর?
এই যে আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য নেয়ামত উপভোগ করছে মানুষ, সেই মানুষ আল্লাহকেই অস্বীকার কেন করছে? যদি করে তবে তার শাস্তিই বা কী?
আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠিত নেই এই দেশে, আছে বরং মানুষের তৈরি নিয়মনীতি।
আল্লাহ কি বলেননি, “আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর রাজত্ব কেবল তারই”? তিনি কি বলেননি, ” যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানানুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফের”? তিনি কি মুমিনদের কাফের সম্প্রদায় সম্পর্কিত কোনো বিধান দেননি? তিনি কি বলেননি, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পার্শ্ববর্তী কাফের সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করো…”? অথচ এই কথা, এই বিধান ও দর্শন সম্বন্ধে জানে কয়টা মুসলিম? বরং কুরআনের এই কথাগুলো ওয়াজ মাহফিলে বললেও সাধারণ জনগণ রুষে ওঠে! চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। তাদের বিস্ময় যেন ধরে না, শান্তির ধর্ম ইসলামে মারামারি কাটাকাটির এইসব কিসের বিধান!
অথচ যে বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে মানুষ এই না- দেখা জান্নাত-জাহান্নামের আশা ও ভয়ে আছে, রাত জেগে নামাজ পড়ে, উপোস করে, পশু জবাই করে, সেই একই বিশ্বাসের ওপরই ভিত্তি করে ইসলামের জিহাদ নামক বিধানটির যৌক্তিকতা আসে।
এবং এটি কুরআন হাদিসের শাশ্বত এক বিধান। যৌক্তিক বিধান।
কিন্তু আজ যেন সেটিই উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ নামে আখ্যায়িত হচ্ছে।
কেন?
লেখক- কবি ও কলামিস্ট