নিজস্ব প্রতিনিধি:
আসন্ন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) শিশুদের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদের (বিজিপি) পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘শিশুদের জলবায়ু ঘোষণা হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
এরআগে প্রজন্ম সংসদের ৩০০ সদস্যের (শিশু) পক্ষ থেকে স্পিকার, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সামনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বরিশাল থেকে আসা ১৩ বছর বয়সী শিশু কাবা কাওশিন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শিশুদের রক্ষা করুন। দূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমান। সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ান। সমস্যা সমাধানে আমাদের অংশ নিতে দিন। আমাদের কথা শুনুন।’
আরেক শিশু প্রতিনিধি মাহিব রেজা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুদের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সেসব বিষয়ে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরতে চায়। ওই শিশুরা জানায়, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা এবং ঝড় সহনশীল জলবায়ুবান্ধব স্কুল তাদের প্রয়োজন। তাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে এমন নীতি ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবশ্যই তাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাতিসংঘ শিশু তহবিল, বাংলাদেশ প্রজন্ম সংসদ (বিজিপি) এবং বাংলাদেশ ডিবেট ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)। জাতীয় সংসদের সহায়তায় দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার শিশু প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই ছায়া সংসদের মাধ্যমে ইউনিসেফ গত ২০ নভেম্বর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অনলাইনে শিশু জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা তাদের ভবিষ্যতকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে সুরক্ষিত রাখতে সংসদ সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য একটি জলবায়ু ঘোষণাপত্র তৈরি করে। যা আনুষ্ঠানিক ভাবে স্পিকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিশু অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সভাপতি শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, তানভীর শাকিল জয়, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আরমা দত্ত ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শিশু সাংসদ ক্রিস্টিনা ঐশী মহন্ত।
অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে অর্ন্তভুক্ত করা জরুরি। এখানে ৩০০ শিশু প্রতিনিধির যে ঘোষণাপত্র রয়েছে, সেটিকে মডেল ধরা যেতে পারে। শিশুরা জানিয়েছে, তারা এ পৃথিবীকে কিভাবে দেখতে চায়, কিভাবে তাদের ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে তাদের কি মতামত আছে। আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের অবস্থান নিতে হবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য দায়ী নয়, অথচ বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশ। তাই দেশের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিশুদের ওপর প্রভাবের বিষয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বতর্মান প্রজন্ম তাদের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন। তাদের পদক্ষেপে ভবিষ্যত বিশ্ব উপকৃত হবে।
ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিশুরা দায়ী নয়। অথচ শিশুরা ভুক্তভোগী। বাল্যবিবাহ, পাচার, শিশু শ্রম ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সর্ম্পকিত। শিশুদের জন্য বাস উপযোগী পৃথিবী গড়তে এবং শিশুদের সুরক্ষা দিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি–বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে দ্রত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সারা দেশের ৩০০ শিশু প্রতিনিধি ৩০০ সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য এবং অংশিদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে এবং তাদের মতামত প্রকাশ করেছে। এই অজর্নকে কাজে লাগাতে হবে।
বিএসডি / আইকে