প্রতিবছর ২৫ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপিত হয়। ফার্মাসিস্টরা দেশে বিদেশে মানসম্মত ওষুধ তৈরির মাধ্যমে স্বাস্থসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ফার্মেসি পেশায় কর্মরতদের উৎসাহ প্রদান এবং এই পেশা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ২০১০ সাল থেকে সারাবিশ্বে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষকে এ মহান পেশা সম্পর্কে জানাতে এবং এ পেশার মানকে উচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন রাখতে সারাবিশ্বে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন আবু হানিফ।
“স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজনীতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা”
২৫শে সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস’। এই গুরুত্বপূর্ণ দিবসটি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পালিত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ অথবা ফ্যাকাল্টি, ফার্মাসিস্টদের অঙ্গ সংগঠন, ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানি সহ ঔষধ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালন করে থাকে। ২৫শে সেপ্টেম্বর এফআইপির জন্মদিন, যে সংগঠনটি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেজন্যই ২৫শে সেপ্টেম্বরকরে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এফআইপির প্রেসিডেন্ট ডোমিনিক জর্ডান বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ, কার্যকরী, মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ঔষধ সারা বিশ্বের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছাতে ফার্মাসিস্টদের অবদান সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা। “Comprehensive Health Care” অর্থাৎ একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা বলতে যা বোঝায়। একজন ফার্মাসিস্টের কাজ পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া এবং দিক নির্দেশনা সম্পর্কে বোঝানো। উন্নত বিশ্বে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট এমবিবিএস ডাক্তারের পাশাপাশি রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঔষধ সম্পর্কিত উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা থেকে মুক্তিলাভের পর করোনাকালীন তিনি যাদের সেবা, উপদেশ ও সহযোগিতায় আরোগ্য লাভ করেছেন তাদের কথা বলতে গিয়ে তিনি ফার্মাসিস্টদের কথাও বলেছেন।
করোনাকালীন যখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শুধুমাত্র তখন মানবিক দৃষ্টিকোণ খেয়াল রেখে শুধুমাত্র ঔষধ উৎপাদন, বিক্রয় এবং বিতরণ ব্যবস্থা চালু ছিল। তখন এই কাজ নিঃস্বার্থ করেছিল মাস্ক পরিহিত ফার্মাসিস্টর। করোনাকালীন অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ যেমন – রেমডিসিভির, ফেভিপিরাভিরের মতো ঔষধ অল্প সময়ে উৎপাদন ও বিতরণ নিশ্চিত করেছেন দেশের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির গ্র্যাজুয়েটরা। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ব্যাপস্থাপনায় একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন ফার্মাসিস্টের ভূমিকা একে অপরের পরিপূরক। তাই, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে ফার্মাসিস্টদের যথাযথ সম্মামনা এবং তাদের কাজের স্বীকৃতির দিকে দৃষ্টি দেয়া হোক।
নুসরাত আলম ইরা
শিক্ষার্থী: ফার্মেসি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ফার্মাসিস্ট অর্থ “ঔষুধ বিশেষজ্ঞ”। ঔষুধ বিষয়ে সামগ্রিক জ্ঞান থাকাই ফার্মাসিস্টদের বৈশিষ্ট্য
ফার্মাসিস্টদের অবদান “স্টার টপোলজির” মতো যেখানে ঔষধ ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে থাকেন ফার্মাসিস্ট। যাদের ত্রুটির কারণে সমগ্র ঔষধ ব্যবস্থাপনায় বলা যায় চিকিৎসা ব্যবস্থাই বিঘ্নিত হতে পারে।ফার্মাসিস্টদের কাজ অনেকেই সঠিকভাবে জানে না। অনেকে ভাবেন ফার্মেসি বিষয়টা নিয়ে পড়া শেষে ফার্মেসি দোকানে ঔষধ বিক্রি করাই বুঝি তাদের কাজ। কিন্তু মোটেও এমনটা নয়। ফার্মাসিস্টদের কাজ হলো বিস্তৃত।
ঔষধ প্রস্তুতকরণ, ঔষধের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং পরীক্ষাকরণ, ঔষধের ডিজাইন, কত তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষণ করতে হবে এসবই ফার্মাসিস্টদের কাজ। এছাড়াও ঔষধের কার্যকারিতা, ফার্মাকোলোজি, থেরাপিউটিক একশান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, একইসাথে একাধিক ঔষধ সেবনে ঔষধের কি ধরনের ইন্টারেকশন হতে পারে ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ফার্মাসিস্টদের কাজের অন্তর্ভুক্ত। ঔষধ প্রস্তুতকরনে ফার্মাসিস্টদের কোনো একটা ভুলের কারনে পুরো ঐ ব্যাচের ঔষধেরই কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায় আর এমতাবস্থায় বাজারজাত করা হলে এবং রোগী পর্যন্ত পৌছালে (রোগী সেবন করলে) হাজার হাজার রোগীর ক্ষতি হতে পারে যেখানে ডাক্তারের একটা ভুলের কারণে একজন রোগীর ক্ষতি হতে পারে।
আবার ডাক্তারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টরাও রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনে কোনো অসংজ্ঞতি বা স্বাস্থ্যঝুকির সম্ভাবনা থাকলে ফার্মাসিস্টরা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিরাপদ ও কার্যকর ঔষধ প্রদানে সহযোগিতা করেন এককথায় প্রেসক্রিপশনের পুনঃপরীক্ষণ (রিচেক) এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীদের ঔষধের ডোজ, ডোজেজ বুঝিয়ে দেয়া অর্থাৎ কখন, কয়বার, কিভাবে, কতটুকু খাবেন এবং পূর্ববর্তী এই সম্পর্কিত ঔষধ সেবনের রেকর্ড বিশ্লেষণ এবং কোন ঔষধ কাদের জন্য কন্ট্রাইন্ডিকেটেড (কারা এই ঔষধ সেবন করতে পারবে না) ইত্যাদি অর্থাৎ রোগীদের সাথে অনবরত ঔষধ নিয়ে কাউন্সেলিং করে থাকেন। এমনটা যদি না করা হয় তাহলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হতে বঞ্চিত হবে।
তবে অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, উন্নত দেশগুলোতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট ব্যবস্থা চালু থাকলেও আমাদের দেশে কোনো সরকারি হাসপাতালেই এখন পর্যন্ত কোনো হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের সেবা প্রদানের সুযোগ নাই। রোগীদের স্বার্থে, আমাদের নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগের জন্য আজকের এই ” ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বফার্মাসিস্ট দিবসে” নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিআকর্ষণ এবং সরকারের নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
মোছাঃ আমিনা খাতুন
শিক্ষার্থীঃ ফার্মেসি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
‘ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্যসেবায় রোল মডেল’
মেডিসিন এক্সপার্ট,ড্রাগ ডিজাইনার যেটাই বলি না কেন এসব বলতে আমরা ফার্মাসিস্টদের বোঝাই।সারাবিশ্বে ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্যসেবায় রোল মডেল হিসেবে কাজ করে।বৈশ্বিকভাবে প্রথম সারির সর্বোচ্চ বিশ্বস্থ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী পেশার মধ্যে ফার্মাসিস্ট পেশা একটি।একজন রোগীকে মেডিসিনের সঠিক ডোজ,এটিবায়োটিকের কোর্স সম্পর্কে অবহিত করে একজন ফার্মাসিস্ট।এরা সাধারন জনগণের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন আবিষ্কার করে।শুধু মেডিসিন বানানো পর্যন্তই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ থাকে না সেগুলোর বিপণন কাজেও তাদের রয়েছে অসামান্য ভূমিকা।টক্সিসিটি,পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, ড্রাগ উন্নয়ন সবকিছু মাথায় রেখে একজন ফার্মাসিস্ট মেডিসিন তৈরি করে।কেমিক্যাল এর সঠিক অনুপাত নিয়েও তাদের চিন্তা করতে হয়।মেডিসিন এক্সপার্ট কথাটি এইজন্যই তাদের সাথে মিলসম্পন্ন।আর এসব এক্সপার্টদের উদ্দেশ্যে সারাবিশ্বে ২৫শে সেপ্টেম্বর পালন করা হয় বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস।২০১০সাল থেকে এটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী,শিক্ষকগণ,বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী এ দিবসটি বিভিন্ন আঙগীকে পালন করে থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে এ দিনটি পালন করার উপলক্ষ্যে চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি।শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ও ছাত্র-ছাত্রীরা দিনটিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছেন।পরিশেষে আমি এটাই বলব যে ফার্মাসিস্টরা একাত্মতার সাথে একটি সুস্থ বিশ্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।এ বছরের প্রতিপাদ্যটি সবার মনে গাথা থাকুক এটাই কাম্য “Pharmacy united in action for a healthier world”.
স্মৃতি সরকার
শিক্ষার্থীঃ ফার্মেসি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
“ফার্মাসিস্টরা নৈতিক মানদন্ডের ধারক”
সভ্যতার শুরুর দিকে রোগচর্চা এবং ঔষধ তৈরি/ব্যবহার একজনের হাতেই ন্যস্ত ছিলো। কালক্রমে বিজ্ঞানের সমৃদ্ধির সাথে যখন দেখা গেল একজনের পক্ষে অসুখ এবং ঔষধ দুটি শাখার জ্ঞানকে একসাথে ধারন করা সম্ভব নয়,তখনি ১২৪০ সালে জার্মানির সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের রাজ আদেশের মাধ্যমে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশো বছর আগে ‘চিকিৎসাবিজ্ঞান’ ও ‘ঔষধবিজ্ঞান’ নামে দুটি আলাদা শাখার উৎপত্তি হয়।পরবর্তীতে ঔষধবিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক গৃহীত নাম হয় ‘ফার্মাসিস্ট’। সাধারণ অর্থে যারা সঠিক মানসম্পন্ন ঔষধ তৈরি,বিতরণ,সংরক্ষন,পরিবহন,রোগীকে ঔষধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানদান,ঔষধবিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং ঔষধের সঠিক ও কার্যকরী ব্যবহারের সাথে জড়িত থাকেন তাদেরকেই ফার্মাসিস্ট হিসেবে পরিগনিত করা হয়ে থাকে।একজন ডাক্তারকে যদি মাস্টার অফ ডিজিজ ধরা হয়,তাহলে একজন ফার্মাসিস্ট হচ্ছে মাস্টার অফ মেডিসিন। তাই চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিপূর্ণতায় ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্ট একে অন্যের পরিপূরক।এজন্যে সারা পৃথিবীতে ফার্মাসিস্টদের আলাদা একটা সম্মানের আসন আছে।
ঔষধ তৈরি থেকে শুরু করে যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্ট নৈতিকতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলেই মানুষের মনে তাদের জন্যে আলাদা একটা সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে।মানুষ ও সমাজের এই বিশ্বাসকে অটুট রাখতে ফার্মাসিস্টকে অবশ্যই নৈতিক মানদন্ড মেনে ঔষধ তৈরি,বিতরন কিংবা বিক্রি করতে হবে।কোনভাবেই নকল,ভেজাল,নিম্নমানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ তৈরি কিংবা বিক্রি করা উচিত নয়।নৈতিকতাকে অবলম্বন করে ঔষধ তৈরি,বিপনন এবং ঔষধের সুষ্ঠু ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ফার্মাসিস্টরা হয়ে উঠুক স্বাস্থ্যসেবার রোল মডেল।’ফার্মাসিস্টরা হোক জাতির বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু,ঔষধ হোক সবার নিরাপদ পথ্য’।
আনোয়ার হোসেন রাজু
শিক্ষার্থীঃ ফার্মেসি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিএসডি/এফএ