নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় (বুস্টার) ডোজ দেওয়ার বিশেষ কর্মসূচি পালিত হবে আজ মঙ্গলবার। এই কর্মসূচিতে ৭৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ বছর বা তার ওপরের সব বয়সী মানুষের জন্য এই আয়োজন। বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা।
এর আগে গত ৪ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত দেশের এক কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই সময় দেওয়া হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না ও ফাইজারের টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে গত রবিবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৮ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬১ জন এবং তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছে তিন কোটি তিন লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৮ জন। এ তথ্য অনুসারে যারা দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে তাদের সবাইকে বুস্টার ডোজের টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে আট কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ২২৩ ডোজ ফাইজারের টিকা।
এ ছাড়া পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও ফাইজারের করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। গত এপ্রিলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন জুনে এ টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। গত ২৮ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের দ্রুত টিকা দেওয়া হবে।
কিন্তু কবে নাগাদ দেওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দিতে হলে দুই কোটি ১৯ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে বলে কালের কণ্ঠকে জানান করোনা ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক। সার্বিক এই অবস্থায় দেশে কী পরিমাণ ফাইজারের টিকা রয়েছে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স-গ্যাভির কাছে আমাদের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। ’
ডা. শামসুল হক বলেন, এর আগে করোনা টিকা দেওয়ার বিশেষ কর্মসূচি পালনের সময় যেসব টিকাকেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছিল, মঙ্গলবারও সেসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হবে।
ঢাকার দুই সিটির পরিকল্পনা
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জনকে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই সিটির ২১৭টি টিকাকেন্দ্রে এই টিকা নিতে পারবে নগরবাসী। তবে যাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পূর্ণ হয়েছে, শুধু তারাই এই টিকা নিতে পারবে।
ডিএনসিসি এলাকায় ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে কেন্দ্র থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি বুথে ৫০০ করে এক হাজার টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মিরপুর ডিওএইচএস এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি মাতৃসদনেও এক হাজার করে টিকা দেওয়া হবে। উত্তরের মোট ৬০টি কেন্দ্রে ৬০ হাজার জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি এর চেয়ে বেশি টিকাগ্রহীতা আসে, তাদেরও ফেরানো হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মঙ্গলবার যারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস হয়ে গেছে, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এদিন যতজন আসবে কাউকে ফেরত দেওয়া হবে না। ’
সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দুটি করে মোট ১৫০টি কেন্দ্রে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এ ছাড়া পাঁচটি মাতৃসদন এবং ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে দিনব্যাপী করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। প্রতি কেন্দ্রে ৫০০টি করে মোট ১৫৭টি কেন্দ্রে ৭৮ হাজার ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দক্ষিণের পাঁচটি মাতৃসদন এবং দুটি হাসপাতালের সাতটি কেন্দ্রে প্রতিদিনই করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১৫০টি কেন্দ্রে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। ’
চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৬৯,৫০০ ডোজ
চট্টগ্রামে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ বুস্টার ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে নগরে ৪৭ হাজার ও জেলায় তিন লাখ ২২ হাজার ৫০০ ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসব টিকার চাহিদাপত্র পাঠান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে এক হাজার ডোজ করে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, মঙ্গলবার জেলার ১৫ উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নে মোট ৬০০ ওয়ার্ডে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৫০০ ডোজ করে বরাদ্দ থাকবে। এ ছাড়া ১৪ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে তিনটি টিম থাকবে। প্রতিটি টিমের ৫০০ ডোজ করে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের চার মাস পর বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ প্রদর্শন সাপেক্ষে (কভিড-১৯ টিকার কার্ড বা সনদ) নিকটবর্তী টিকাদান কেন্দ্রে বা বাংলাদেশের যেকোনো কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকাগ্রহীতা বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
বিএসডি/ফয়সাল