নাজমুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্রিটেনে দুই ব্যক্তি করোনার নতুন সংস্করণ ‘ওমিক্রন’ দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে। এ দু’জন ও তাদের পরিবারকে বর্তমানে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাদের আরও পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ট্রাকিং করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ধরনটি যুক্তরাজ্যে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শনিবার রাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ মেডিক্যাল উপদেষ্টা ড. সুসান হপকিন্স সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটিকে ভয়াবহ। এ নিয়ে শঙ্কার মুখে নানা কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এর অংশ হিসেবে দেশটিতে গণপরিবহন ও দোকানগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া থাকলেও যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সময় করোনা শনাক্তে করা হবে পিসিআর টেস্ট। পাশাপাশি কারও শরীরে নতুন ধরন মিললে তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
এ দিকে আগামী বড়দিনের আগেই করোনা ভাইরাস থেকে উচ্চ মাত্রায় সুরক্ষিত থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যারা ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৬ মাস পরে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এ জন্য নিজেকে নিরাপদ রাখতে বৈধ বয়সীদের আগামী ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা।
তারা বলেছেন, বুধবার ইউরোপের কিছু অংশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ফলে নতুন করে ওই অঞ্চল আবারও করোনা মহামারির এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে। এর ফলে ওইসব দেশের কয়েকটিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এখন পর্যন্ত ব্রিটেনে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। যার বয়স ৪০ বছর বা তার বেশি এবং ক্লিনিক্যালি যেসব মানুষ চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, তারা সবাই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার ৬ মাস পরে বৈধভাবে বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। টিকা বিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী ম্যাগি থ্রোপ বলেছেন, যদি আপনি করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ না নিয়ে থাকেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নিয়ে নিন।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে নতুন একটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ফাইজার/বায়োএনটেকের টিকার দুটি ডোজ নেয়ার ৬ মাস পরে সংক্রমিত হওয়া থেকে সুরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এতে বুস্টার ডোজ নেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ফুটে উঠেছে। ইসরাইলে ৮০ হাজার মানুষের ওপর ওই গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ফাইজার/বায়োএনটেকের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার চার মাস পরে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ এবং ছয় মাস পরে তা কমপক্ষে ১০ গুন বৃদ্ধি পায়।
এর আগের গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই টিকা নিলে কমপক্ষে ৬ মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে উচ্চ মাত্রায় সুরক্ষা দেয়। এ থেকে বোঝা যায়, এই ভাইরাসের বিস্তার বা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য বুস্টার ডোজ কর্মসূচি কতটা প্রয়োজন। নতুন গবেষণার
যে বার্তা বেরিয়ে এসেছে, তা হলো টিকা নেয়ার ৫ মাসের মধ্যে বুস্টার ডোজ নেয়া উচিত।