নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরে কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইসের চাষাবাদে সফলতা এসেছে। এই চাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও দামে বেশি হওয়ায় কালো চালের আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে নাটোরের চাষিরা। কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইস সূদুর চীন-জাপানের মতো উন্নত দেশের চাল হলেও এখন তা নাটোরেও চাষাবাদ হচ্ছে। নাটোরের সদর উপজেলার মো. মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল এই চালের চাষাবাদে সফলতা পেয়েছেন। একই সাথে বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলাতেও এই চাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখা গিয়েছে।
নাটোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে ২০২১-২২ আমন মৌসুমে নাটোর সদরে ২.৩৯ বিঘা জমিতে কালো ধান আবাদ করে হেক্টর প্রতি ২.৬০ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া গেছে। .১৩ হেক্টর জমিতে ধান পাওযা গেছে হেক্টর প্রতি ২.৫৭ মে.টন ও বাগাতিপাড়ায় .৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করে হেক্টর প্রতি ২.৮০ মে.টন কালো ধান পাওয়া গেছে। অথচ ২০২০-২১বোরো মৌসুমে বাগাতিপাড়ায় .১৩ হেক্টর কালো ধান আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৩.৩০ মেঃটন কালো ধান পাওয়া গিয়েছিল।
২০২১-২২ আমন মৌসুমে নাটোর সদরের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল তার প্রতিষ্ঠান অর্গানিক পল্লীর অধীনে ১ বিঘা জমিতে ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল উৎপাদনে উদ্যোগ নিয়ে সে এখন সফল কালো চাল কৃষক।
নাটোর সদরের লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে গড়ে ওঠা তার কৃষি খামার অর্গানিক পল্লী। বিভিন্ন মাধ্যমে কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইসের উপকারিতা ও গুণাগুণ জানতে পেরে সে উদ্যোগী হয় এই চালের চাষাবাদে। অনলাইনে কেজি প্রতি ৬শ টাকা হিসেবে ১২শ টাকায় ২ কেজি কালো ধানের বীজ কিনে আবাদ শুরু করেন নিজস্ব ১ বিঘা জমিতে। চাষাবাদ অন্যান্য চালের মতই। তবে কীটনাশক ও সার কম লাগে দেখে আবাদ করতে খরচ কম হয়।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল জানান, গত বছরের শুরুতে এই চালের বৈশিষ্ট্য, পুষ্টি গুণ, উপকারিতা, চাষাবাদের ধরণ সম্বন্ধে অনলাইনে জানতে পারি। প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও সাহস করে এই চলের আবাদে উদ্যোগী হই। ২ কেজি কালো ধান প্রথমে বীজতলায় ছিটিয়ে চারা তৈরি করে পরে ১ বিঘা জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে চারা রোপণ করেছিলাম। দেশে উৎপাদিত অন্যান্য ধানের মতোই এই ধানেও কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে কম পরিমাণ লাগে।
তিনি আরোও জানান, কালো ধান ক্রয়, সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিক মজুরী মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে বিঘায় ১১ হাজার টাকা। ১ বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ১৫ মন কালো ধান। এখান থেকে কালো ধান বীজ পাওয়া যাবে ১৩ মণ। প্রতি কেজি কালো ধান বিক্রি করা যাবে সাড়ে ৩শ টাকা। সে হিসেবে ১ মণ কালো ধানের দাম আসবে ১২ হাজার টাকা ও ১৩ মণ কালো ধানের দাম আসবে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বড় বড় সুপার শপে এই কালো চাল বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। তবে নাটোর শহরে স্থানীয় ভাবে এই কালো চাল বিক্রি করা যাবে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা।
নাটোর সদর উপজেলা-কৃষি অফিসার মো. মেহেদুল ইসলাম বলেন, কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। এই চাল কিছু কোম্পানি প্যাকেটজাতের মাধ্যমে হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে কেজিপ্রতি ৫শ’ টাকায় বিক্রি হতে পারে। তবে এ চালের উৎপাদন নাটোরের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, কালো চাল সাধারণ চালের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। তুলনামূলক বিচারে অ্যানথোসায়ানিন, প্রোটিন ও ফাইবার অন্যসব চালের থেকে কালো চালে বেশি থাকে। চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ।
তিনি বলেন, সাধারণ ধানের মতোই পরিচর্যা করতে হয় এই ধানের। বাড়তি কোনো কিছুই করতে হয় না। কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো।
তবে সচেতন মহল মনে করেন কালো চালের পুষ্টিগুণ নিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অথবা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগে গবেষণা করলে এই কালো চালের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে আরোও নিশ্চিত ধারনা পাওয়া যেতে পরে।
বিএসডি/ এলএল