আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ধরন নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্কের মধ্যেই ভারতে আরও ৩ জনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে। রোববার (১২ ডিসেম্বর) নতুন করে শনাক্ত ওই তিন রোগী দেশটির অন্ধ্রপ্রদেশ, চন্ডীগড় এবং কর্নাটক রাজ্যের বাসিন্দা। এর মাধ্যমে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৬ জনে।
ভারতে ধীরে ধীরে জাল বিস্তার করছে ওমিক্রন। দেশটির অন্যান্য রাজ্যে আগেই ওমিক্রন রোগী শনাক্ত হলেও অন্ধ্রপ্রদেশ, চন্ডীগড়ে এবারই প্রথম শনাক্ত হলো। অন্যদিকে কর্নাটকে রোগী বেড়ে হলো ৩ জন।
অন্ধ্রপ্রদেশে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি ভারতে ফিরেছেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি আয়ারল্যান্ড থেকে মুম্বাই হয়ে বিশাখাপত্তনমে ফিরেছিলেন। ২৭ নভেম্বর তার করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এরপরই ওই ব্যক্তির নমুনা জিনোম পরীক্ষায় জন্য পাঠানো হয়। তখনই জানা যায় ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু, তার শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ নেই। এমনকী, ১১ ডিসেম্বর তার পুনরায় করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
এদিকে, চণ্ডীগড়েও ২০ বছর বয়সী এক যুবকের শরীরে পাওয়া গেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। গত ২২ নভেম্বর ইতালি থেকে ভারতে ফিরেছিলেন তিনি। ১ ডিসেম্বর তার কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তবে ফাইজারের টিকার দু’টি ডোজই নিয়েছিলেন তিনি। রোববার পুনরায় তার করোনা টেস্ট করা হয়। তবে এখনও রিপোর্ট হাতে আসেনি। এছাড়া কর্নাটকেও নতুন করে এক ব্যক্তি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ভারতের ৭ রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে সেগুলো হলো- মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, কর্নাটক, দিল্লি অন্ধ্রপ্রদেশ ও পাঞ্জাব। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে ১৭ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে মহারাষ্ট্র রাজ্যজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যের এক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, শনি ও রোববার রাজ্যের কোথাও বড় জমায়েত বা মিছিল করা থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতে ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের থাবা। শনিবার পর্যন্ত ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। রোববার তা ৩৬ জনে পৌঁছালেও এই সংখ্যাটা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ভাইরাসের ধরন নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পরিচালক ড. পুনম খেত্রপাল বলছেন, একটি নতুন ভ্যারিয়্যান্ট সামনে আসা মানে এই নয় যে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তবে ওমিক্রনের জন্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তার ভাষায়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু, আমাদের আরও তথ্যের প্রয়োজন। ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন দুর্বল কি না এই প্রসঙ্গে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য নেই।’
উল্লেখ্য, গত ২ ডিসেম্বর ভারতে ওমিক্রন সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। তার মাত্র ১০ দিনের মধ্যে রোগীর সংখ্যা ৩৬ জনে পৌঁছেছে। তবে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের কারও মধ্যেই গুরুতর অসুস্থতা দেখা যায়নি।