ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর দৈনিক সংখ্যা অবশেষে এক লাখের নিচে নামল। দুই মাসের বেশি সময় পর দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। আজ মঙ্গলবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৮৬ হাজার ৪৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময় করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ১২৩ জন, যা আগের দিনের চেয়ে কম।
সবশেষ এই তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৩। মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৯।
ভারতে টানা ১৫ দিন ধরে ১০ শতাংশের নিচে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার কমে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে।
রোববার দেশটিতে শনাক্ত হয় ১ লাখ ৬৩৬ জন। মারা যান ২ হাজার ৪২৭ জন। শনিবার শনাক্ত হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬০ জন। মারা যান ২ হাজার ৬৭৭ জন। শুক্রবার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শনাক্ত হন। মারা যান ৩ হাজার ৩৮০ জন। বৃহস্পতিবার ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৬৪ জন শনাক্ত হন। মারা যান ২ হাজার ৭১৩ জন। বুধবার শনাক্ত হন ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৪ জন। মারা যান ২ হাজার ৮৮৭ জন। গত মঙ্গলবার শনাক্ত হন ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৮ জন। মারা যান ৩ হাজার ২০৭ জন।
ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হচ্ছে মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ। উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশেও উল্লেখযোগ্য হারে করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে মৃত্যুও হচ্ছে।
দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল বিকেলে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে এ কথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ২১ জুন থেকে এই লক্ষ্যে সব রাজ্য সরকারকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করা হবে।
করোনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নেয় ভারত। এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২৩ কোটি ৬১ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানলে প্রায় দুই মাস আগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এখন সংক্রমণ কমতে থাকায় সতর্কতার সঙ্গে বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিভিন্ন রাজ্য।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকে। গত মাসে ভারতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হন।
৪ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হন।
৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভারতের দখলে। ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। আর মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই রয়েছে ভারত।
ভারতে সংক্রমণ ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনগুলোর মধ্যে একটিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।