ভারতে নারী পাচারে অভিযুক্ত তিনজনকে ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। পাচারের শিকার এক কিশোরীর মামলায় পরিপ্রেক্ষিতে এই তিনজনকে গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নারী পাচারের সঙ্গে গ্রেপ্তার তিনজন জড়িত। যে কিশোরী মামলা করেছে সে এদের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়েছিল। এই চক্রের প্রধান নিজেই হাজারের বেশি নারীকে পাচারে পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে এদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই পুলিশ রিমান্ড চাইছে।
পুলিশ বলছে, ভারতে পাচার হওয়া ওই কিশোরী সম্প্রতি দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মেহেদি হাসান বাবু (৩৫) মামলার বাদী ওই কিশোরীসহ এক হাজারের বেশি নারীকে ভারতে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
গ্রেপ্তার অপর দুই আসামী মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের মামলার বাদীসহ পাঁচ শতাধিক নারীকে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি কক্ষে রাখতে সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারীদের মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সীমান্তে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুই ব্যক্তি।
গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদি হাসানের (৩৫) বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সে প্রায় সাত থেকে আট বছর ধরে মানব পাচারে জড়িত। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোন ও ডায়েরিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মুঠোফোন নম্বর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভুক্তভোগীর “আধার নম্বর” ও ভারতে পাচারকৃত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভুক্তভোগীর নাম ও মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।’
যেভাবে পাচার করা হয় পালিয়ে আসা তরুণীকে
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, পাচার হওয়া ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামী টিকটক হৃদয়ের পরিচয় ২০১৯ সালে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে। টিকটক ‘তারকা’ বানাতে চেয়ে বা ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীটিকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু।
এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০ থেকে ৮০ জনকে নিয়ে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ করেন হৃদয়। এরপর একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ‘পুল পার্টির’ আয়োজন করে হৃদয়।
অবশেষে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহের মাজারে আয়োজিত টিকটক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এ মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে বলে জানিয়েছেন তেঁজগাওয়ের উপকমিশনার।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ভারতে পাচারের পর ভুক্তভোগীকে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় কয়েকটি বাসায় পর্যায়ক্রমে রাখা হয়। পালিয়ে আসা তরুণীটি এ চক্র কর্তৃক পাচার করা আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ভুক্তভোগীকে সেখানে দেখতে পান। তাঁদের সুপারমার্কেট, সুপারশপ ও বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে।
মো. শহিদুল্লাহ আরও জানান, বেঙ্গালুরুতে পৌঁছার কয়েক দিন পরই ভুক্তভোগীকে চেন্নাইয়ের ওওয়াইও হোটেলে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনের পর সামান্য দয়া ও করুণাও দেখাননি এ চক্রের সদস্যরা। বরং কৌশলে নেশাদ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র অবস্থার ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য ও পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয় ভুক্তভোগীকে।
অবশেষে ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর এই কিশোরী পালিয়ে আসে বলে জানিয়েছেন ডিসি মো. শহিদুল্লাহ।