আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতে ভয়াবহ হারে বেড়েছে বিবাহিত নারীদের আত্মহত্যার হার। দেশটির জাতীয় সংস্থার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ভারতের অপরাধ পরিসংখ্যান বিষয়ক সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) জানিয়েছে, ২০২০ সালে ভারতে আত্মহত্যা করেছেন মোট ২২ হাজার ৩৭২ জন গৃহবধু। গড় হিসেবে দেখা গেছে, ওই বছর প্রতিদিন প্রতি ২৫ মিনিটে আত্মহত্যা করেছেন একজন গৃহবধূ।
এনসিআরবি আরও জানিয়েছে, ২০২০ সালে ভারতে যতসংখ্যক নারী আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে গৃহবধূদের হার শতকরা হিসেবে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
১৯৯৭ সাল থেকে ভারতে আত্মহত্যার রেকর্ড সংরক্ষণ করা শুরু করে এনসিআরবি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ভারতে আত্মহত্যা করেন ২০ হাজারেরও বেশি গৃহবধূ। এই সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়েছিল ২০০৯ সালে। ওই বছর পুরো ভারতে আত্মঘাতী গৃহবধুর সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৯২ জন।
সাধারণভাবে প্রচার করা হয়- ‘পারিবারিক সমস্যা’ কিংবা ‘বিয়ে সংক্রান্ত ঝামেলার’ কারণে ভারতে গৃহবধুদের আত্মহত্যার হার বাড়ছে; কিন্তু সত্যিই কি তাই?
ভারতের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- সরকারি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের গৃহবধূদের আত্মহত্যার একটি বড় কারণ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতন। দিনের পর দিন চলা এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ৩০ শতাংশেরও বেশি গৃহবধূ।
এছাড়া মানসিক নির্যাতন, দিনের পর দিন গৃহস্থালীর শ্রমসাধ্য একঘেঁয়ে কাজ ও মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতেও আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেক গৃহবধূ।
ভারতের উত্তরপ্রদেশে বারানসী শহরের ক্লিনিক্যাল মনোবিদ ডা. উষা ভার্মা শ্রীবাস্তব বিবিসিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘নারী প্রকৃতিগতভাবে শান্ত ও সহনশীল, কিন্তু সেই সহনশীলতারও একটা সীমা আছে।’
‘ভারতে মেয়েদের বিয়ের জন্য সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮। অধিকাংশ অভিভাবক তাই মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেন।’
‘এবং বিয়ের পর সে যখন একজন স্ত্রী ও গৃহবধু হয়, ভারতের সংস্কৃতি অনুযায়ী তাকে রান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়াসহ যাবতীয় গৃহস্থালীর কাজের ভার পড়ে তার ওপর। তার ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্র হয়ে পড়ে খুবই সীমিত এবং তার হাতে টাকা-পয়সাও বিশেষ থাক না।’
‘ফলে তার এতদিনের পড়াশোনা ও নিজের পায়ে দাঁড়ানের যে স্বপ্ন- তা ফিকে হওয়া শুরু করে এবং সেই জায়গায় ভর করে হতাশা ও শূন্যতা। একপর্যায়ে এই হতাশাই তাকে আত্মহত্যার পথে প্ররোচিত করে।’
বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ অবশ্য ভিন্ন। এ সম্পর্কে ডা. ঊষা ভার্মা বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেলে তারা বাড়ির বাইরে থাকে। ফলে একটা বয়সে গিয়ে নারীরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এছাড়া ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে যে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা দেখা দেয়, সেজন্যও আত্মহত্যা করেন অনেকে।’
তবে ভারতের এই আত্মহত্যার সমস্যাটি সমাধানযোগ্য বলে মনে করেন অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানী। মনোবিদ সৌমিত্র পাথারে বিবিসিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘অধিকাংশক্ষেত্রেই তাৎক্ষনিক উত্তেজনার বশে আত্মহত্যা করেন নারীরা। ব্যাপারটি অনেকটা এরকম- পুরুষরা ঘরে আসে, স্ত্রীকে পেটায় এবং তারপর স্ত্রী আত্মহত্যা করে।’
‘যখন সে চরম উত্তেজনার বশে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেই মুহূর্তে যদি তাকে থামানো যায়, তাহলে পরবর্তীতে তার আত্মহত্যার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।’
এসএ