ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে কমেছে মৃত্যু। আজ বৃহস্পতিবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ২ লাখ ১১ হাজার ২৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময় দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৮৪৭ জন।
সবশেষ এ তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩। ভারতে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫।
ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে হিসাব দেশটির সরকার দিচ্ছে, তার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে বাড়ছে মৃত্যুও।
২৪ মে ভারতে দৈনিক করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা গত ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম দুই লাখের নিচে নেমেছিল। এদিন দৈনিক করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও চার হাজারের নিচে নেমেছিল। ২৫ মে দেশটিতে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু উভয় সংখ্যা বাড়ে।
ভারতে ২৫ মে ২ লাখ ৮ হাজার ৯২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৪ হাজার ১৫৭ জন। ২৪ মে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ৫১১ জন। ২৩ মে ২ লাখ ২২ হাজার ৩১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৪ হাজার ৪৫৪ জন। ২২ মে ২ লাখ ৪০ হাজার ৮৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ৭৪১ জন। ২১ মে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৪ হাজার ১৯৪ জন। ২০ মে প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৪ হাজার ২০৯ জন। ১৯ মে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ৮৭৪ জন। ১৮ মে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৪ হাজার ৫২৯ জন। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত মানুষ করোনায় মারা যাননি। ১৭ মে ভারতে ৪ হাজার ৩২৯ জন মারা যান। এদিন প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ মে প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। গত ২১ এপ্রিলের পর দেশটিতে এদিনই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখের নিচে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা যান ৪ হাজার ১০৬ জন।
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকে।
গত ৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। আর ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ২৪ মের আগের সাত দিন ভারতে তিন লাখের কম করোনা শনাক্ত হচ্ছিল।
৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সবশেষ ২৫ মে দেশটিতে মৃত্যু চার হাজারের ওপরে ওঠে।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। গত ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। আর মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরেই রয়েছে ভারত।
ভারতে সংক্রমণ ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়া ভারতে সংক্রমণ বাড়ার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও খেলাধুলার আয়োজনকে দায়ী করা হয়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়। ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে। তা ছাড়া টিকা গ্রহণের হারও কম।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাবসহ নানা গুরুতর সংকটে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় ভারতের পাশে এসে দাঁড়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।