আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের বাসিন্দা যোগব্যায়াম প্রেমী জেমি মিক গুজরাট ভ্রমণ শেষে ভারত ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমনকি ভারতে থাকাকালীন সেখানকার মনোমুগ্ধকর স্মৃতিগুলো স্মরণ করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন তিনি। গুজরাটের আহমেদাবাদের বিমানবন্দর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ ফ্লাইটে ওঠার আগে বন্ধুর সঙ্গে সেই স্মৃতি নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। আর সেই ঘটনা মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্টও করেছিলেন।
সেখানে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে শেষ রাত।’’ কিন্তু সেই শেষ রাতই যে তার জীবনের শেষ সময় সেটি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। জেমি মিক মারা গেছেন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনায়। জেমির সঙ্গে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন একসাথে ভারতে ঘুরতে আসা ফিয়নগালও।
বুধবার রাতে ইনস্টাগ্রামে দেওয়া পোস্টে জেমি তার সঙ্গী ফিয়নগাল গ্রীনলোর সঙ্গে ভারতে কাটানো ‘মোহময় অভিজ্ঞতার’ কথা স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে আমাদের শেষ রাত।’’
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে জেমি আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘গুডবাই ইন্ডিয়া।’’
বৃহস্পতিবার ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১। ২৪২ আরোহীকে নিয়ে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। আহমেদাবাদের পুলিশ বলেছে, বিধ্বস্ত বিমানটির কোনও আরোহীই সম্ভবত বেঁচে নেই। তবে এই বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বুধবার ইনস্টাগ্রামে কয়েকটি স্টোরিতে আহমেদাবাদের ঐতিহ্যবাহী হোটেল ‘‘দ্য হাউস অব এমজিতে’’ থাকার কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন জেমি। তিনি লেখেন, ‘‘এই হোটেল…।’’
ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, লন্ডনের আধ্যাত্মিক মানবসেবা কেন্দ্র ‘‘দ্য ওয়েলনেস ফাউন্ড্রির’’ পরিচালক ছিলেন জেমি। ইনস্টাগ্রামের একটি ভিডিও স্টোরিতে ফিয়নগাল বলেছিলেন, ‘‘ভারতে এটাই আমাদের শেষ রাত। অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই মোহনীয়। হ্যাঁ, অনেক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে… আমরা সব কিছু একসাথে করে একটা ভ্লগ তৈরি করবো। মনে হয় এখন পর্যন্ত এটাই হবে আমার প্রথম ভ্লগ। একটু অস্বস্তি লাগলেও পুরো সফর নিয়ে একটা ভ্লগ বানিয়ে শেয়ার করবো।’’
গুজরাটের ঐহিত্যবাহী খাবার থালিও খেয়েছিলেন জেমি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, গুজরাটি থালি খাওয়া আর ওই হোটেলে কাটানো শেষ রাত ছিল এই সফর শেষ করার সবচেয়ে সুন্দর উপায়।
‘‘অনেক কিছু হয়েছে…এসব অভিজ্ঞতা মনে রাখা আর সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারলে অনেক ভালো লাগবে। কারণ এটা ছিল এক অসাধারণ ভ্রমণ। শেষ রাতে আমরা এই চমৎকার হোটেলে থেকেছি আর দারুণ সুস্বাদু থালি খেয়েছি। এটা ছিল পুরো ভ্রমণ শেষ করার এক নিখুঁত উপায়। যে কারণে আমি এটা সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য মুখিয়ে আছি।’’
কয়েক ঘণ্টা পর বিমানবন্দরে পৌঁছে বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন জেমি ও ফিয়নগাল। তখন আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন তারা। সেই ভিডিওতে দুই বন্ধু শেষবারের মতো মেতে উঠেছিলেন খোশগল্পে। ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য জেমি ও ফিয়নগালের শেষ কথোপকথন তুলে ধরা হলো…
ফিয়নগাল: আমরা বর্তমানে বিমানবন্দরে রয়েছি। বোর্ডিং করছি। গুডবাই ভারত।
জেমি: গুডবাই। ইংল্যান্ডে ফেরার জন্য এখন আমরা দশ ঘণ্টার ফ্লাইটে থাকবো।
ফিয়নগাল: জেমি, এই ভ্রমনে তোমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?
জেমি: আমি এটা আগেও বলেছি।
ফিয়নগাল: আলাদা ভিডিওতে বলেছিলে।
জেমি: সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি… জানি না।
ফিয়নগাল: বাহ, দারুণ, চমৎকার। দারুণ সঙ্গ দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ (হাসি)। আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো—সঙ্গীর ওপর ধৈর্য্য হারানো যাবে না।
জেমি: তুমি তো এখনই শুরু করে দিয়েছো। আমরা যখন এয়ারপোর্টে চা খাচ্ছিলাম তখনই। প্রমাণ হয়ে গেছে তুমি কিছুই শিখোনি।
ফিয়নগাল: আমরা শান্ত মনে, খুশি মনে ফিরছি।
সূত্র: এনডিটিভি।