খেলাধূলা প্রতিনিধি:
অবশ্য বিসমাহ উপমহাদেশের বলেই হয়তো এটিকে আলাদা করে দেখতে হচ্ছে, উপমহাদেশে যে এখনো মেয়েদের মাতৃত্ব আর ক্যারিয়ারের মধ্যে সমন্বয় করার ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। তবে নিউজিল্যান্ডে চলতে থাকা এবারের মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এমন আটজন ‘মা’ আছেন।
ম্যাচের পর মেয়েকে নিয়ে মাঠে আসার অনুভূতিটা ব্যাখ্যা করছিলেন বিসমাহ, ‘অনেক আবেগময় একটা মুহূর্ত আমার জন্য। অন্য রকম একটা অনুভূতি। মাঠে ফিরে আসা, বিশ্বকাপে খেলা…। আমার মা আর মেয়ে আমার সঙ্গে এখানে আছে, তাই এটা আমার জন্য অনেক বিশেষ কিছু। বিশেষ কিছু করেই বিশ্বকাপটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’
তবে মেয়ের দায়িত্ব সামলে ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে যে তাঁকে শারীরিক, আর্থিক অনেক কষ্টও সইতে হচ্ছে, সেটিও ম্যাচের আগের দিন ভারতের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ব্যাখ্যা করেছিলেন বিসমাহ। ‘একটা বাচ্চার তো মাকে দরকার হয়। আমার ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়—আমার বাচ্চা কার কাছে থাকবে? আর আমি যখন মাঠে থাকব, ওই সময়টাতে কে আমার বাচ্চার খেয়াল রাখবে?’—বলছিলেন বিসমাহ।
সহজ সমাধান হতে পারে শিশু পালনের দায়িত্বে একজন আয়া রাখা, কিন্তু সেখানেও তো আর্থিক ব্যাপার জড়িয়ে যায়। বিসমাহ সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন, ‘ন্যানি (শিশু পালন করার দায়িত্বে নিয়োজিত নারী) নিয়োগ দেওয়া, তাঁকে আবার সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া তো অনেক খরচের ব্যাপার, আর আমরা মেয়ে ক্রিকেটাররা তো এত বেশি অর্থ আয় করি না যে এমন বিলাসিতা দেখাতে পারব। যে বেতন পাই, সেটা আমাদের খেয়েপরে বাঁচতে, জীবিকা নির্বাহ করতে সাহায্য করে, কিন্তু মাতৃত্ববিষয়ক নিয়মনীতি ঠিকঠাক করা না থাকলে বাচ্চা নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যেত।’
তবে এত কষ্ট সয়ে নিজের মেয়েকে নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া যে সার্থক, সেটি জানাতে গিয়ে মায়ের গর্বও কম হয় না, ‘একটা শিশু আশপাশে থাকলে দলে একটা ভিন্ন রকম শক্তি টের পাওয়া যায়। সবাই অনেকটা নির্ভার থাকে। আপনি যখন কোনো একটা কাজে অনেক বেশি মনোযোগী থাকবেন, সেটা আপনার ওপর চাপ তৈরি করে। ওই সময়ে একটা শিশুর আশপাশে থাকা আপনার সব অপ্রয়োজনীয় চাপ কমিয়ে দেয়।’
প্রথমে ভারতের স্পিনার একতা বিষ্টকে দেখা যায় ছোট্ট ফাতিমার সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটাতে। ফাতিমা তখন পাকিস্তান দলের সঙ্গে যাওয়া এক কর্মীর কোলে ছিলেন, বিষ্ট গিয়ে ফাতিমার ছোট্ট আঙুল ধরে তার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ছোট্ট ফাতিমারও তখন কী হাসি!
এরপর ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে, পুরস্কারবিতরণী অনুষ্ঠানে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শেষে বিসমাহ যখন ফিরলেন ড্রেসিংরুমে, তখন আবার ভারতের অনেক ক্রিকেটার চলে আসেন বিসমাহর মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর লোভে। বিসমাহ ফাতিমাকে কোলে রেখেছেন, আর ভারতের হারমানপ্রীত কর, স্মৃতি মান্ধানা, শেফালি ভার্মা, রেনুকা ঠাকুর, যস্তিকা ভাটিয়া, রিচা ঘোষ ও মেঘনাকে দেখা গেছে বিসমাহর চারপাশে দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে।
ছোট্ট ফাতিমাও সম্ভবত অনেক উপভোগ করেছে সময়টা। হাত নাড়িয়ে, হাসিতে ভারত-পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটারদের চোখের মণি হয়ে উঠেছিল সে।
পরে বিসমাহ ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন ভারতের নারী ক্রিকেটাররা। সেটি আবার বিশেষ মর্যাদায় জায়গা পেয়েছে আইসিসির টুইটার অ্যাকাউন্টের পোস্টেও।
বিএসডি/ এফএস