আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল; যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে।
আজ সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে ট্রাম্প বলেন, “আমরা একটি সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাত থামিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি, যদি সত্যিই (ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে) এমন একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতো—তাহলে খুব খারাপ হতো, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতো। ওয়াশিংটন যে তা রুখে দিয়েছি— এতে আমি খুব গর্বিত।”
ট্রাম্প আরও বলেন যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সহায়তা করতে প্রস্তুত। সেই সঙ্গে তিনি মনে করেন যে দশকের পর দশক ধরে যে বৈরী সম্পর্ক চলছে দুই দেশের মধ্যে, তা অবসানে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হতে পারে বাণিজ্য।
“দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমনে সবচেয়ে কার্যকর পথ হতে পারে বাণিজ্য। এই যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে আমি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমি ভারত ও পাকিস্তান— উভয়কেই বলেছিলাম, ‘আমার কথা শুনুন, আমরা আপনাদের উভয়ের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বিপুল হারে বাড়াতে চাই। উত্তেজনা থামান। যদি আপনার থামেন, তাহলে আমরা বাণিজ্য করতে পারব; আর যদি আপনারা না থামেন— আমরা কোনো ধরনের বাণিজ্যে যাব না।”
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করল পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি।
সূত্র : জিও নিউজ, এএনআই