নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতির অধীনে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যে ১ হাজার ৪০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে ২০২০ সালে এ মহাসড়কে যুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কোন সড়ক মহাসড়কটির সঙ্গে যুক্ত হবে, তা ঠিক করতে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। যদিও সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিকল্প রুটগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আজ বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভা ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় বাংলাদেশ কীভাবে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে যুক্ত হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার জন্য এরই মধ্যে তিনটি বিকল্প রুট চিহ্নিত করেছে সওজ অধিদপ্তর। এর একটি হলো সিলেটের শ্যাওলা সুতারকান্দি রুট। বর্তমানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ করিডোরের উন্নয়নকাজ চলমান।
সওজ অধিদপ্তরের চিহ্নিত করা দ্বিতীয় বিকল্প রুটটি হচ্ছে সিলেটের তামাবিল থেকে ভারতের ডাউকি। বাংলাদেশ অংশে এ করিডোর উন্নয়ন করা হচ্ছে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি উন্নয়নে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক।
সর্বশেষ বিকল্প রুটটি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত। এ করিডোরেও বর্তমানে উন্নয়নকাজ চলমান। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-আখাউড়া মহাসড়কটির উন্নয়নকাজ চলমান। সওজ অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত এ তিন রুট থেকে যেকোনোটি ভারত-মিয়ানমার থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
আগামীকাল বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে একটি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠান বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। মহাসড়কটিতে যুক্ত হওয়ার জন্য আমরা একাধিক রুট প্রস্তাব করেছি। তবে এ রুটগুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমুদ্বিনাইয়ের টেলিফোনে আলাপ হয়। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাবিত ভারত-মিয়ানমার থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে যোগদানের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরো জোরদার করার জন্য ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে বর্ধিত সংযোগের ওপর জোর দেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সামিটে ভারত-মিয়ানমার থাইল্যান্ড মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারত-মিয়ানমার থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার উদ্যোগ ছাড়াও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে ছয়টি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো এশিয়ান হাইওয়ে, সাসেক হাইওয়ে করিডোর, সাসেক রোড করিডোর, বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও বিবিআইএন মোটরস ভেহিকল এগ্রিমেন্ট।
এর মধ্যে ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। তিনটি রুটে (এএইচ-১, এএইচ-২ ও এএইচ-৪১) বাংলাদেশে এশিয়ান হাইওয়ের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৭১ কিলোমিটার। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সব জাতীয় মহাসড়ককে চার বা তার চেয়ে বেশি লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন করতে দুটি ‘মিসিং’ লিংকে পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতুর কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে থাইল্যান্ডের সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড বিমসটেক রোড করিডোরের উদ্যোগেও একসঙ্গে রয়েছে। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, ভুটান ও নেপালও রয়েছে বিমসটেক সড়ক করিডোরে।
সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারত-মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড মহাসড়কে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ান হাইওয়ে ও বিমসটেক রোড নেটওয়ার্কের সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি।
বিএসডি/ এফএস