নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবের ইতিহাস। অন্যদিকে শোকেরও। এ আন্দোলন নানা দিক থেকে দেখার ও তুলে ধরার দাবি রাখে। কিন্তু কাজটি খুব সহজ নয় বলে ভাষা আন্দোলনবিষয়ক বই প্রকাশ হয় খুব কম। তবে আশার কথা, প্রতি বছরই বইমেলায় ভাষা আন্দোলন ও এ-বিষয়ক কিছু বই প্রকাশ হচ্ছে। অনেকেই ভাষা আন্দোলনের নানা শাখা-প্রশাখা ধরে নতুন কিছু প্রকাশের চেষ্টা করছেন।
মেলা ঘুরে রোববার ভাষা আন্দোলনবিষয়ক যে কয়েকটি বই পাওয়া গেছে তার মধ্যে আগামী থেকে প্রকাশ হয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- এম আবদুল আলীমের লেখা ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা’ ও ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জেলাভিত্তিক ইতিহাস’ এবং হাবীবুল্লা ফাহাদ রচিত ‘দুই ভাষাসংগ্রামীর মুখোমুখি : আহমদ রফিক ও রফিকুল ইসলাম’। উজান প্রকাশ করেছে মু আ লতিফের লেখা ‘ভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ’, কথাপ্রকাশ এনেছে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি যুগান্তরকে বলেন, পরিতাপের বিষয় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাছ থেকে আমরা খুব বেশি লেখা পাইনি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষক, লেখকের অভাব আমরাও অনুভব করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে গবেষণা করে বই প্রকাশ করা উচিত। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারত। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছুই পাইনি।
গতকাল শুরুর পর থেকেই দলে দলে মানুষ আসেন মেলা প্রাঙ্গণে। তারা বইও কেনেন। কিন্তু মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণে হঠাৎ হানা দেয় বেরসিক বৃষ্টি। এতে হতভম্ব হয়ে স্টল ও প্যাভিলিয়ন গোছাতে থাকেন বিক্রয়কর্মীরা। ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে তারা বই রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ভাষাশহিদ মঞ্চ উদ্বোধন : অমর একুশে বইমেলা ২০২২ উপলক্ষ্যে বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত ভাষাশহিদ মুক্তমঞ্চের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ ছাড়া বক্তব্য দেন অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। কবিতা পাঠ করেন কবি আসলাম সানী, হাসানাত লোকমান ও শাহাদৎ হোসেন নিপু।
মঞ্চের আয়োজন : এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বিশ্বশান্তি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিয়া রহমান। আলোচনায় অংশ নেন জালাল ফিরোজ এবং খান মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন শ্যামসুন্দর সিকদার। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার এবং কবি ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি করেন মীর বরকত, অলোককুমার বসু, ফয়জুল্লাহ সাঈদ এবং আবৃত্তি সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’-এর শিল্পীরা।
শত ভাস্কর্য ও ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু : বাংলা একাডেমি প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী গ্রন্থমালা সিরিজের ৩৮তম বই ‘শত ভাস্কর্য ও ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু’। আলোকচিত্র অ্যালবামের এ বইটি ঠিক বই নয়; অনেকটাই প্রামাণ্য দলিল। ড. মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক দেশের আট বিভাগের ৯৬টি ও দেশের বাইরের ৪টি ভাস্কর্য-ম্যুরাল সচিত্র উপস্থাপন করেছেন এ বইয়ে। কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে সত্যিই এক মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছেন তিনি, যার প্রমাণ মেলে প্রতিটি পৃষ্ঠায়। ১৫৭ পৃষ্ঠার এ প্রামাণ্য দলিলে ঝকঝকে আলোকচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে বিভাগ ও দেশওয়ারি। পাশাপাশি অত্যন্ত সুন্দর-সাবলীলভাবে প্রতিটি ভাস্কর্য ও ম্যুরালের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বাংলা ও ইংরেজিতে বর্ণনা করেছেন। দ্বিভাষিক এ বইটি আর্টকার্ডে চাররঙে ছাপা। প্রতিটির মুদ্রিত মূল্য রাখা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
শত ভাস্কর্য ও ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু বইটির প্রধান সম্পাদক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা, সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সম্পাদনা পর্ষদে রয়েছেন মোবারক হোসেন, তপন বাগচী, সাহেদ মন্তাজ ও কুতুব আজাদ। ভিন্ন আঙ্গিক ও চিন্তার যোগসূত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মোজাম্মেল হকের এ নিবেদন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদৃত হবে নিঃসন্দেহে।
নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে, রোববার মেলায় ৮৯টি নতুন বই এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মুহম্মদ নূরুল হুদার মহানবী, শাহজাহান কিবরিয়ার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আগামী থেকে মোহাম্মদ আবু সালেদ রচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও রবীন্দ -বিতর্ক, বিভাস এনেছে কবি মহাদেব সাহার সুন্দর, তোমারই হাতে তুলে দেবো সব, গ্রন্থকুটির এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের সাহিত্যে নারীর মুখ ও অন্যান্য, আগামী প্রকাশনী এনেছে মোনায়েম সরকারের শেখ হাসিনা তোমার প্রকাশ হোক সূর্যের মতন, কিংবদন্তি পাবলিকেশন এনেছে আসলাম সানীর ঢাকাইয়া গল্পগুলো।
বিএসডি/ এফএস