আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিতে আঘাত হানা ৭ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে গ্রীষ্মকালীন ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডেমিনিকান রিপাবলিক ও হাইতি নিয়ে গঠিত দ্বীপ হিসপানিওলার খুব কাছে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন গ্রেস অবস্থান করছিল। গেল সোমবার বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি করে ঝড়টি প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে এগোতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সিএনএনের আবহাওয়াবিদ হ্যালে ব্রিংক।
ব্রিংক বলেছেন, অঞ্চলটিতে বর্তমানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে মঙ্গলবার পর্যন্ত কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকায় ৩৮ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ দিকে দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান জেরি চ্যান্ডলার বলেন, আসন্ন ঝড় নিয়ে আমরা ভীষণই উদ্বিগ্ন। কারণ এটি আমাদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছি।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে হাইতির পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানা এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ছয় হাজার ৯০০ জনেরও বেশি লোক। আর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেক মানুষ।
হাইতির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শক্তিশালী ভূমিকম্পটির আঘাতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮৬৮টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও পাঁচ হাজার ৪১০টি বাড়ি।
এ দিকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে হাইতির প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি এরই মধ্যে দেশব্যাপী এক মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আর তিনি জনগণকে সংহতি দেখানোর জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে আমরা অধিক পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছি। এছাড়া আহতদের মধ্যে যাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন- আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি। আমরা আজ এবং আগামীকাল আরও কিছু লোককে সরিয়ে নেব।
প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি আরও বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যতটা সম্ভব জীবিতদের উদ্ধার করে আনা। আমরা জানতে পেরেছি- স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে লেস কায়েসের হাসপাতালগুলোয় আহত ও হাড়ভাঙা মানুষে ভরে গেছে।
এ দিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় ভয়াবহ এই দুর্যোগটির ফলে দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শনিবার সকালে ক্যারিবীয় দ্বীপপূঞ্জজুড়ে ভয়ঙ্কর ভূকম্পন অনুভূত হয়। এতে ভবন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ক্যারিবীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, হাইতির পেটিট ট্রুও ডি নিপ্পেস থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্স থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ভূমিকম্পটি ১১ বছর আগে হাইতিতে আঘাত হানা ৭ মাত্রার কম্পনের চেয়েও শক্তিশালী এবং অগভীর। ২০১১ সালের ওই ভূমিকম্পে অঞ্চলটিতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর ভেঙে পড়েছিল অসংখ্য বাড়িঘর ও ভবন। তাছাড়া বহু মানুষ এরই মধ্যে গৃহহীন হয়ে আছেন।
শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হওয়া হাইতির প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিউবার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গুয়ানতানামো শহরের এক বাসিন্দা জানান, আমরা সবাই ভীষণ ভীত ও সন্ত্রস্ত। দীর্ঘদিন এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়নি। আমা বাড়ি ভেঙে না পড়লেও আসবাবপত্র নড়েচড়ে গেছে।
বিএসডি/এমএম