মাজিদ আহাম্মেদ: ভেজাল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও এর মধ্যেই রয়েছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা যে হয়নি, তা সহজেই প্রতীয়মান। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, অননুমোদিত ও রুগ্ণ ওষুধ কারখানার পাশাপাশি ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার চলতি ওষুধগুলোতে দেদারছে ভেজাল দিচ্ছে। আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে এমন অনেক কারখানায় নকল ওষুধ তৈরির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযানে। উল্লেখ্য, দেশে ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স রয়েছে ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের। নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদনের কথা তাদের। তা না করে বৈধ কারখানায় নকল ওষুধ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি। এমন অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তথ্য অনুযায়ী, এসব কারখানায় কিডনি, ক্যান্সার থেকে শুরু করে সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধির নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। আয়ুর্বেদিক কারখানার অনুমোদন থাকায় সন্দেহ করছে না প্রশাসন কিংবা সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সময় এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দায়ীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হলেও নকল ওষুধের সিন্ডিকেটের জোরে অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়াচ্ছেন তারা। বিষয়টি দুঃখজনক।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশে ভেজাল ওষুধ তৈরি এবং বাজারজাতকরণে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে আরও অনেকের মতো কিছু কিছু বৈধ ইউনানি-আয়ুর্বেদিক কারখানায় বহুল পরিচিত কোম্পানির ওষুধ নকল করা হয়। তারা ইউনানি কারখানার অনুমোদন নিয়ে কিডনি, লিভার, ক্যান্সারের ওষুধ বানান। আর কোনটি আসল আর কোনটি নকল ওষুধ, বিষয়টি ওষুধের দোকান মালিকদের অজানা থাকার কথা নয়। এর পরও অভিযোগ, ন্যূনতম পেশাদারিত্ব না দেখিয়ে এসব অসাধু দোকানদার মানুষের হাতে তুলে দেন ভেজাল ওষুধ। ফলে অপরাধী শুধু যারা ভেজাল ওষুধ বানান তারা নন, যারা বিক্রি করেন তারাও সমান অপরাধী। অতিরিক্ত কমিশনের লোভে তারা দিনের পর দিন এ অপরাধ করে চলেছেন। স্মর্তব্য, ব্যবসায়ীরা কোম্পানি থেকে ওষুধ কিনে যে দামে বিক্রি করেন, নকল ওষুধ তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা হয়। আর বলাই বাহুল্য, এসব অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। গুটিকয় নকল ব্যবসায়ীর জন্য দেশের সব ওষুধ ব্যবসায়ীকে এ অপকর্মের দায় নিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে ১৪৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। ভেজাল এবং নকল ওষুধ এই সুনাম এবং আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সংগত কারণেই ভেজাল ওষুধ তৈরির বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ মাদকের চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতি করছে এ ভেজাল ওষুধ। দেশে কারা ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে এবং কীভাবে বিপণন করছে, তা মোটামুটি সংশ্লিষ্টরা অবহিত বলেই ধারণা করা যায়। তাই এদের শায়েস্তা করা খুব কঠিন কাজ হবে বলে মনে হয় না। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাকে আমরা কার্যকর দেখতে চাই। প্রয়োজনে তদারকি সংস্থায় আরও লোকবল নিয়োগ দেয়া হোক। শুধু চুনোপুঁটি নয়, যেসব প্রভাবশালী লোকজন ভেজাল ওষুধ তৈরি এবং বিপণনে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনা হোক। এই নিয়ে শৈথল্য প্রদর্শনের অর্থ দাঁড়াবে জনস্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকিগ্রস্ত করা। তাই ত্বরিত ব্যবস্থা জরুরি