নিজস্ব প্রতিবেদক,
সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে ভোট না দেওয়ায় এক চায়ের দোকানীকে মারধর ও দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের চায়ের দোকানী অসীম চন্দ্র শীল নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।
সোমবার (২৬ জুলাই) সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নির্যাতিত ওই চায়ের দোকানী।
লিখিত বক্তব্যে অসীম চন্দ্র শীল বলেন, সোমবার (২১ জুন ) প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থন না করে আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেই। কিন্তু সেই প্রার্থী বিজয়ী হতে ব্যর্থ হয়। বিজয় অর্জন করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার।
জয়ী হয়ে তিনি আমাকে ক্ষমা চাইতে তার কাছে যেতে বলেন। ক্ষমা না চাইলে মারধর করার হুমকি দেন বিজয়ী চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা। ভোট না দেওয়ার কারণে রামনা থেকে চলে যাওয়ারও হুমকি দেন।
ভয় পেয়ে গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈকালিন বাজারে ক্ষমা চাইতে মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে যাই। এসময় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ফরিদ (৩৫), বাপ্পি (৪০), ফোরকান (২৬), ইমরান (১৭) এবং রাজু জোমাদ্দারসহ (৪০) আরও অনেকে মিলে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মেরে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ফাটিয়ে দেয়। এসময় স্থানীয় কয়েকজন রক্ষা করতে গেলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়।”
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বশিরুল আলম ও এসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে মাথায় রক্তাক্ত জখম নিয়ে অসীম চন্দ্র শীল পার্শবর্তী আরএন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে তাকে ধরে এনে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার নিজেই লোহার পাইপ দিয়ে পূণরায় নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।
এসময় এসআই সিদ্দিক ঘটনাস্থলে এবং ওসি বশিরুল আলম ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন। এসআই সিদ্দিকের সামনেই চেয়াম্যান নজরুল তাকে নির্মম নির্যাতন করেন।
একই সময়ে বৈকালিন বাজারে অসীম চন্দ্র শীলের উপর্জনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকানটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মালেক মেম্বার (৫০) নজরুল ইসলামকে থামাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন।
ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল জানান, নজরুল চেয়ারম্যান ক্ষমতাধর নেতা হওয়ায় এবং তার অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভয়ে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে পারেননি। এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করতেও সাহস করেননি তারা। প্রথমে মঠবাড়িয়া হাসপাতালে এবং পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলেও জানান অসীম চন্দ্র শীল।
সংবাদ সম্মেলন শেষে অসীম চন্দ্র শীল বলেন, আমি মামলা করতে চাই। তবে, বামনা উপজেলায় প্রবেশ করলেই আমাকে এবার প্রাণে মেরে ফেলবে। তাই ভয়ে বামনা থানায় যেতে পারছি না। লকডাউনের কারণে আদালতেও মামলা করতে পারছি না। আমি বিচার চাই।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার আরেক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জহিরুল ইসলাম উজ্জল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, মারধরের সময় অসীমকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা নজরুল ইসলামকে সমর্থন দেয়নি তাদেরকে নির্বাচনের পরে খেলা দেখাবেন বলেও নির্বাচন চলাকালীন সময়ে হুমকি দেয় তার ক্যাডার বাহিনী।
এ বিষয়ে রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার মুঠোফোনে বলেন, তিনি বা তার কর্মীরা অসীমকে মারধর করেনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা। অসীম চন্দ্র শীল এবং তার সহযোগীরা তার লোকজনের ওপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে দুয়েকজন সামান্য আহত হতে পারে। এর বেশি কিছুই নয়।
এ বিষয়ে জানতে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বশিরুল আলম বলেন মুঠোফোনে জানান, ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবেন তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বামনা-পাথরঘাটা সার্কেল) তোফায়েল হোসেন বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানি। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হয়েছে। ঘটনার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পুলিশের সামনে থেকে কাউকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়নি। এ ঘটনায় কেউ মামলা করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
বর্তমান সময়/আইপি