নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা মামলার প্রধান আসামি মো. সাজুকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে সাড়ে ৫টায় খুলশী থানার পোড়া কলোনির একটি পাহাড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ওমর ফারুক নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে বৈঠক করেন।
একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মামলার বাদী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাকে না জানিয়ে আসামিকে ছেড়ে দেন খুলশী থানার ওসি। অভিযোগ উঠেছে, এতে দেড় লাখ টাকা লেনদেন হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আফতাব হোসেন বলেন, ভিন্ন একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে থানায় আনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী পক্ষ কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৮ মে দুপুরে লালখান বাজার পোড়া কলোনী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিন বিদ্যুৎ বিভাগে দক্ষিণ জোনের দায়িত্বরত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আলী আক্কাসের নেতৃত্বে অটোরিকশার গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে হামলা চালায় একদল লোক। এতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যান আমিন উদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান ও শফিকুর রহমান নামে তিনজন আহত হয়।
এ ঘটনায় সরকারি কর্তব্যরত কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলশীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুন্তল সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় মো. সাজুসহ ৭ জনকে। তাদের মধ্যে ঘটনার দিন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মো. খোকন (২০), লাকী বেগম (৩৮), ফাতেমা বেগম (৫০) ও রোজিনা বেগম (৩৭) নামে চার আসামিকে। এ ছাড়া, প্রধান আসামি সাজু ও মো. শুক্কুর ও মো. সাজ্জাদ নামে তিন আসামি পলাতক ছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে প্রায় সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। আসামিরা ভ্রাম্যমাণ আদালত কতৃক জব্দ করা অটোরিশার চার্জার ও ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে যায়। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসামি সাজু নিজেকে নগরের লালখান বাজার এলাকায় বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। তার বাবা মুহাম্মদ ইসমাইল লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। মঙ্গলবার লালখান বাজার এলাকায় চুরির অভিযোগ তুলে এক সিকিউরিটি গার্ডকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায় আসামি সাজু। স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশের একটি টিম ভুক্তভোগী উদ্ধারের পাশাপাশি সাজুকে খুলশী থানায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
খুলশী থানার একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে খুলশী থানায় ছুটে যান লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ওমর ফারুক। তিনি ওসির সঙ্গে দফায়-দফায় মিটিং করেন। একপর্যায়ে দেড় লাখ টাকায় আসামি সাজুকে ছেড়ে দেয় ওসি।
ওসি আফতাব হোসেন বলেন, সাজু যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা মামলার আসামি, আমরা জানতাম না। সবশেষ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও খুলশী থানার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসামির কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, একজন আসামি থানায় আনার সঙ্গে সঙ্গে তার নামে আগে মামলা আছে কি না তা সিডিএমএসে দেখতে হয়। সেই সিডিএমএসেই সাজুর বিরুদ্ধে মামলাটি রেকর্ড রয়েছে। আবার আসামি সাজুর বিরুদ্ধে মামলাটি আফতাব হোসেনের নিজ সাক্ষরে রেকর্ড হয়েছে।
লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজু আমাদের লোক। সবশেষ যাকে অপহরণ করা হয়েছিল তিনিও আমাদের লোক। আমি থানায় গিয়ে মীমাংসা করে সাজুকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। অন্য মামলার বিষয়ে আমি জানি না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলশীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কুন্তল সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজু আমাদের মামলার প্রধান আসামি। তাকে গ্রেপ্তার বা ছেড়ে দেওয়া কোনোটিই আমাদেরকে জানায়নি পুলিশ।