অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম
মনের উপর চাপ পড়লে (বোন), কেন তার জমজ ভাই ( শরীর) ব্যথা পায়? এর রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আসুন জেনে নেই কি সে ব্রেইন মেকানিজম।
মানসিক চাপের ফলে ব্রেইনের “হাইপোথেলামাস” থেকে সিআরএইচ হরমোন নিঃসরন হয়> সেটি এসিটিএইচ হরমোন নিঃসরন করে> যা এড্রিনাল কর্টেক্সকে সক্রিয় করে> ফলে গ্লুকোকরটিকয়েডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই গ্লুকোকর্টিকয়েড- শরীরকে জরুরি অবস্থায় (ইমারজেন্সী) যা যা করণীয় তা করতে সামর্থ্য জোগায়- অনেকটা যুদ্ধাবস্থায় রাষ্ট্র যা করে তেমন (বাংলাদেশ-মায়ানমার নয়, ভারত-পাকিস্তান বা ভারত- চীন যুদ্ধাবস্থায় গেলে যেমন ঘটে)।
কি করে? শরীরকে বাড়তি শক্তি জোগায়, (সব ধরনের কেন্দ্রীয় রসদ জোগান দেওয়া), বিপদ মোকাবিলায় হার্টকে অধিক সক্রিয় করে তোলে (এটি হচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট)। অন্যদিকে, শরীরের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম স্থগিত হয়ে পড়ে (দেশে জরুরি অবস্থায় যেমনটি ঘটে)। স্বাভাবিক বেড়ে উঠা (গ্রুথ), প্রজনন করা, রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্হার দিকে কম নজর দেওয়া (বহিঃশক্তির আক্রমন রোখা তখন প্রধান লক্ষ্য)।
প্রকৃত বিপদ মোকাবিলার জন্য স্রষ্টা আমাদের ব্রেইনে এরকম “প্রতিরক্ষা” ব্যবস্থা তৈরী করেছেন, যাতে আমরা বিপদকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু ব্রেইন যখন ভুল করে “ধারণাগত” বিপদাশঙ্কা বা “উদ্বেগে” বার বার এরকম ইমার্জেন্সী অবস্থা জারি করে তখন এই ক্রমাগত ও প্রায় স্থায়ী যুদ্ধাবস্থার কারণে আমাদের সকল সহায়, সম্পদ, শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। (ধরুন, বাংলাদেশকে যদি এরকম অকারনে ২০ বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়, দেশের ও আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাড়াবে?)
যারা দীর্ঘস্থায়ী ও উপর্যুপরি “স্ট্রেস বা চাপের” মুখে থাকে তাদের অবস্থা এরকমই হয়।
অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম
মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।