ধর্ম ডেস্ক:
আল্লাহর কাছে মানুষই সেরা। মানুষ জগতের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষের জন্য এই জগতের আবির্ভাব হয়েছে। জগতে শুধু মানুষের কাজের হিসাব-নিকাশ আছে। পরকালে আছে জান্নাত ও জাহান্নাম।
যারা আল্লাহর বিধান মতে চলবে, তারাই সফল হবে। তাদের জীবন হবে সুখময় ও আলোকিত। তাদের প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা পৃথক পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রতিটি পুরস্কারের স্বাদ, রং ও অনুভব বান্দাকে পুলকিত করবে। সেই পুরস্কারের আবেশে বান্দা বিমোহিত হয়ে থাকবে।
জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে জান্নাত : মানুষের জীবন-মরণ আল্লাহর হাতে। তিনিই তাদের জীবন দিয়েছেন। সুস্থতার নিয়ামত দান করেছেন। সম্পদের প্রাচুর্য দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া জীবন ও সম্পদের সঠিক ব্যবহারে তিনি বান্দাকে পুরস্কৃত করেন। বান্দার জন্য চিরস্থায়ী জান্নাত নির্ধারণ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। অতঃপর তারা হত্যা করে অথবা নিহত হয়। এর বিনিময়ে তাদের জন্য (জান্নাত লাভের) সত্য ওয়াদা করা হয়েছে—তাওরাত, ইনজিল ও কোরআনে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অগ্রগামী কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে কেনাবেচা করেছ, সে কেনাবেচার জন্য আনন্দিত হও। আর এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১১)
বিপদে গুনাহ মাফ হয় : জীবনের তাগিদ, বাস্তবতার প্রয়োজন ও রিজিকের অন্বেষণে বহু অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জীবনকে পরিচালিত করতে হয়। চলতে-ফিরতে মানুষ বিপদের সম্মুখীন হয়। জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে। অন্ধকার ভর করে। ছন্দঃপতন ঘটে। বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করলে পরকালীন জীবন সুখময় হয়ে ওঠে। গুনাহ মাফ হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুমিন বিপদগ্রস্ত হয়, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার পাপ মোচন করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪০)
ধৈর্য ধারণকারীর জন্য উত্তম প্রতিদান : মানুষের জীবনে বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক বলে-কয়ে আসে না। সহসা বিপদ নেমে এসে জীবনকে বিচূর্ণ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ তখন দিশাহারা হয়ে যায়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করা নবীজির আমল ছিল। আল্লাহ এমন মানুষকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬)। অন্য এক আয়াতে আছে, ‘যারা ধৈর্য ধারণ করবে, আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের কাজের চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৬)
আল্লাহর ওপর ভরসার সুফল : কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা পূরণ না হলে মানুষ ভেঙে পড়ে। হতাশায় মুষড়ে পড়ে। আল্লাহর ওপর ভরসা ব্যক্তিকে সাহসী করে। জীবনকে সুন্দর করে। আখিরাতের জীবনে সুখের জীবন নিশ্চিত করে। আল্লাহর ওপর ভরসা ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘বলো হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)
সৎকাজের বিনিময়ে জান্নাত : মুমিনের জীবনের প্রার্থনা ও জান্নাত জীবন-সফলতার চূড়ান্ত ধাপ ও আশীর্বাদ। তার জীবনে এর চেয়ে কামনার বিষয় আর কিছু নেই। আর সৎকাজ ব্যক্তিকে জান্নাতে পৌঁছায়। চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা সুনিশ্চিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারা হবে ওই সব জান্নাতের অধিবাসী, যার নিচ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরদিন বসবাস করবে। এটাই হলো বড় পুরস্কার।’ (সুরা বুরুজ, আয়াত : ১১)
আরেক আয়াতে পঠিত হয়েছে, ‘যারা সৎকাজের অগ্রভাগে থাকে ও যারা আগে পৌঁছে, তারাই জান্নাতে বিশেষ নৈকট্য লাভকারী হবে।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ১১০-১১২)
দানে মেলে অগণিত সওয়াব : ধনী-গরিব আল্লাহর সৃষ্টি। ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত। গরিবের অধিকার অনাদায়ে ধনীর আখিরাত নষ্ট হবে। পক্ষান্তরে ধনীর দান সম্পদকে পবিত্র করবে। তার আমলনামায় অগণিত সওয়াব যুক্ত হবে। ক্ষুদ্র দানও ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করে। জান্নাতে পৌঁছার রাস্তা সহজ করে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রতিটি শীষে থাকে ১০০টি করে শস্যকণা। এভাবে আল্লাহ যাকে চান, তার কাজে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)
আল্লাহর বন্ধুর ভয় নেই : আল্লাহর সঙ্গে যার বন্ধুত্ব হয়েছে, তার কোনো ভয় নেই। দুশ্চিন্তা নেই। কষ্ট নেই। অভিযোগ-অনুযোগ নেই। আল্লাহ তার সব কিছু সহজ করে দেন। তার হৃদয়কে অপার্থিব আনন্দে ভরে রাখেন। জগতের সবাই মিলেও আল্লাহর বন্ধুর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২)