আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রাণঘাতী রোগ করোনার সংক্রমণ-মৃত্যুতে গত ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিপর্যয়ের মধ্যে আছে গোটা বিশ্ব। সবাই আশায় আছে দ্রুত এই মহামারির অবসানের; কিন্তু সেই আশায় কার্যত পানি ঢেলে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউিএইচও)।
জাতিসংঘভিত্তিক এই সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডা: ব্রুস আইলওয়ার্ড এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জানিয়েছেন, এখনও বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ করোনা টিকার কোনো ডোজ পায়নি। টিকার ডোজের মজুত না থাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি- এমন দেশের সংখ্যাও কম নয়।
‘ফলে, বিশ্বজুড়ে টিকাবণ্টনের যে বর্তমান চিত্র- তাতে খুব সহজেই বোঝা যায়, ২০২২ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে করোনা নির্মূল হবে না’- বিবিসিকে বলেন আইলওয়ার্ড।
তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে গড়ে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, সেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন ৫ শতাংশেরও কম মানুষ।
‘আমি আপনাকে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি- মহামারি নির্মূলে আমরা সঠিক পথে নেই। টিকাদান কর্মসূচির গতি ও বিস্তৃতি যদি বাড়ানো না হয়, সেক্ষেত্রে আগামী ২০২২ সালেও আমাদের মহামারির মধ্যেই বসবাস করতে হবে।’
‘অথচ, টিকাবণ্টনে যদি ন্যূনতম সমতা থাকত, বিশ্বের সব দেশকে প্রয়োজনীয় করোনা টিকা সরবরাহ করা যেত, তাহলে চলতি বছরই আমরা পৃথিবীকে মহামারিমুক্ত করতে পারতাম।’
‘আমরা মনে করি, টিকা কিনতে কোম্পানিগুলোতে গ্রাহকদের যে লাইন বা সারি আছে, উন্নত দেশগুলোর উচিত সেই সারি থেকে অবিলম্বে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া। কারণ, প্রচুর পারিমাণে টিকার ডোজের মজুত তাদের কাছে এখনও আছে, যা তাদের মোট চাহিদা বা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকা কোম্পানিগুলোর লাভের বিষয়টিতে কম গুরুত্ব দিয়ে অনুন্নত দেশগুলোতে কীভাবে টিকার সরবরাহ বাড়ানো যায়, সেটি বিবেচনায় আনা উচিত বলেও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ব্রুস আইলইয়ার্ড।
টিকার অভাবে থাকা দেশগুলোতে ইতিমধ্যে এক কোটির বেশি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে যুক্তরাজ্য। পাশপাশি, আরও ১০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী ২০২২ সাল শেষ হওয়ার আগে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে যেন করোনা টিকার আওতায় আনা হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে দেশটির সরকার।
সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে ব্রুস আইলওয়ার্ড বলেন, জি-৭-এর মতো শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোতে টিকাদানের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিল। তাই এখন ধনী দেশগুলোর উচিত, নিজেদের টিকার মজুত পর্যালোচনা করে তা দরিদ্র দেশগুলোকে দান করা।