আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতে আরও এক ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় রোগীও শনাক্ত হয়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায়। সম্প্রতি তিনি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ভারতে ফেরেন। আর এরপরই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব বিদেশি যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আর এর মধ্যেই এবার দেশটিতে চোখ রাঙাচ্ছে মাঙ্কিপক্স।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, গত ১৩ জুলাই দুবাই থেকে কেরালার কান্নুর জেলায় ফিরেছেন মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ এ খবর নিশ্চিত করে সোমবার জানান, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ৩১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কান্নুরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই ভারতে ফের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের খোঁজ মেলায় বেড়েছে উদ্বেগ। সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে কেরালার প্রশাসন। রাজ্যটির ১৪টি জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের চারটি বিমানবন্দরেও সতর্কতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মাঙ্কিপক্স আতঙ্কে এবার নজরদারি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের কেন্ত্রীয় সরকারও। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ রোধে বিদেশ থেকে দেশটিতে যাওয়া সব যাত্রীকেই এবার থেকে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতেই হবে। মূলত পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এনডিটিভি বলছে, কেরালায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত দ্বিতীয় রোগী শনাক্তের পর সংক্রামক এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের সকল বন্দর এবং বিমানবন্দরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
সোমবার উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবারের এই বৈঠকে বিমানবন্দর ও বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক অফিসের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতে আসা সকল আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর কঠোর স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি ভারতে মাঙ্কিপক্স ভাইরস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।’
নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারতের বিমানবন্দর ও নৌবন্দরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হবে। নজরদারি চালানো হচ্ছে ভারতের অন্যন্য মূল প্রবেশ দ্বারগুলোতেও। ভারতে প্রবেশ করা বিদেশি যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। করোনার মতো চুপিসারে যেন মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্যই আগাম সতর্কতা নিচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
এর আগে অবশ্য দেশের সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্ক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। উপসর্গ নিয়েও সচেতনতা জারি হয়েছে দেশটিতে। মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখা দিলেও বলা হয়েছিল পরীক্ষার কথা, এবারে দেশে দ্বিতীয় আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে আরও বেশি সতর্ক নয়াদিল্লি।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখা দিলে ব্যক্তির রক্ত ও লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)-তে পাঠানোর নির্দেশনা আগেই দিয়েছিল ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ১৪ জুলাই ভারতে প্রথম মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি গত ১২ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে কেরালায় ফেরেন। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে উচ্চপর্যায়ের একটি দল পাঠায়। এছাড়া কেরালার ১৪ জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়।
বিএসডি/ফয়সাল