মাদকের পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, এই সমস্যার কারণে বাংলাদেশ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেশে মাদক উৎপাদন হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে মাদক ঢুকছে। কিছু কুচক্রি দেশে মাদকের বাজার তৈরি ও বিস্তারের পায়তারা করে আসছে। এসব কুচক্রিদের বিরুদ্ধে দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২টার দিকে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যববহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে অনলাইন জুমে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনলাইন জুম মিটিংয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আমাদের দেশে মাদক উৎপাদন হয় না।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে মাদক ঢুকছে। কিছু কুচক্রি মহল দেশে মাদকের বাজার তৈরি ও বিস্তারের পায়তারা করে আসছে। এই মাদকের পাচার রোধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা হয়েছে। এই কুচক্রিদের বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, মাদক একটি ভয়াবহ নেশা যার মাধ্যমে সমাজের তরুণ ও যুবকরা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাদককে নির্মূল করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শুরু সরকার বা প্রশাসনের একার পক্ষে এই লড়াই করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে সম্পূর্ণ দমন করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণে আসতে সক্ষম হয়েছি। ঠিক তেমনভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। তবেই মাদক নির্মূলের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, একটা সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হিসেবে ছিল। তখন এর কিছুই ছিল না। প্রাধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এই অধিদফতরে বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় তৈরি করে জনবল নিয়োগ, একটি সুন্দর কর্মপরিকল্পনা, অবকাঠামো করে এবং বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়ে এর গতি বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অধিদফতরটি মাদক নিয়ন্ত্রণে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদক সম্পর্কে জানি। কিন্তু বর্তমানে নতুন নতুন মাদকের আবির্ভাব হচ্ছে। এবিষয়ে আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মাঠে নজরদারি করছে।
নিরাময় কেন্দ্র প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাদক নিরাময় ও পূর্নবাসন কেন্দ্র রয়েছে। আগে একটি অচল ছিল। পরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট করা হয়েছে। এখন এটি ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। আমরা প্রতিটি বিভাগে ও জেলায় একটি করে মাদক নিরাময় কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এটি চলমান রয়েছে। আস্তে আস্তে এটি সব পর্যায়ে চলবে। তবে আপাতত এটি সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে দিচ্ছি না।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক মাদককারবারি চক্রগুলো বাংলাদেশে মাদকের বাজার তৈরি করতে পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যে কারণে দেশে মাদক পাচার হয়ে আসছে। দেশের সীমান্তে এবং অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক প্রতিরোধে কাজ করছে। আমরাও সৈনিক হিসেবে মাদকের বিরুদ্ধে চেষ্টা চালাচ্ছি।
সর্বস্তরে ডোপ টেস্ট জরুরি উল্লেখ করে শামসুল হক টুকু বলেন, শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে চাকরি জীবনে চাকরিতে প্রবেশের শুরুতে সর্বক্ষেত্রে যদি ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে মাদকের আগ্রাসন কমে যাবে।
তিনি বলেন, ডোপ টেস্ট এর দুটি প্রস্তাব আমি দিয়ে ছিলাম। ডোপ টেস্টের একটি কর্তৃপক্ষ তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। নয়তো ডোপ টেস্ট কে করবে? এর জন্য বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ইনস্টিটিউট অথবা বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং অথরিটি এই দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহছানুল জব্বার বলেন, আমরা মাদকের পাচার রোধে কাজ করছি। এছাড়াও মাদকের চাহিদা এবং চাহিদা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আমাদের অধিদফতর কাজ করছে। তবে সমাজ থেকে মাদকনির্মূল করতে হলে সবস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়াও পরিবারকে মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুফল সন্তানদের কাছে তুলে ধরতে হবে।