নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় চার্জশিট হলে সেই মামলার আসামিরা নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন– জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
যদিও দলটি এর আগে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিল শুধু দোষী সাব্যস্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
শনিবার (১৮ সে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
তিনি বলেন, সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধের কারণে দুবছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে ট্রেডিশনালি তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আরেকটা বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া।
‘তবে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের কারো বিরুদ্ধে যদি মামলার চার্জশিট হয়ে যায় তাহলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। যদিও সাধারণ নিয়ম হচ্ছে একটা লোকের বিরুদ্ধে চার্জশিটে দিলেই অযোগ্য হবে না, দোষী সাব্যস্ত হতে হবে।’
তাহের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ তো ভিন্ন মাত্রার অপরাধ। এটা সাধারণ অপরাধ নয়। এটার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সময়কে ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত মর্মে চার্জশিট হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।
এটা তো কমিশনের প্রস্তাব। এ ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কি? পক্ষে না বিপক্ষে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য অপরাধের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ এক না। এটার জন্য শাস্তির ক্ষেত্রে দুই বছরের অপেক্ষার কথা বলেনি কমিশন। আমরাও তাই কথা বলিনি। চার্জশিটকে আমলে নিতে বলেছি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালেও এরকম একটা আইন হয়েছিল। যেটা ক্রিমিনাল কেসের মতো না। তারা বলেছেন বিশেষ সময়ের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ায় চার্জশিটকেই আমলে নিতে। সেটার সঙ্গে আমরা এগ্রি করেছি।
আপনারা কি তাদের মতটা মেনে নিয়েই এ প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছেন নাকি নিজেরা প্রস্তাব করেছেন– এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে দোষী সাব্যস্ত হলেই কেবল নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন। তবে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের যে আইন সেটা অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা (ঐকমত্য কমিশন) বলেছেন, এটা করলে লম্বা সময় লাগবে। তখন ট্রাইব্যুনালে রায় হবে, সেটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে। সবমিলিয়ে দীর্ঘসময়। সেজন্যই আমরা তাদের মতে একমত হয়েছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল সম্পর্কে তাহের বলেন, একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকারের মাঝে মিনিমাম সময় থাকবে। অন্তবর্তী সরকারের অনেক লম্বা সময় থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু যেহেতু বিশেষ পরিস্থিতিতে আসা, এ সরকারের কাছে সংস্কারের বিষয় আসছে। সংস্কারের জন্যই আমরা মিনিমাম সময়টা দিতে চাই। এরপর শিগরিরই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনটাই বেটার সলিউশন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনে হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলছে বর্তমান সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা তরুণদের নিয়ে গঠিত এনসিপির নেতাকর্মীরাও একই দাবি করে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জোর দিয়ে আসছে। এ নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
‘গণহত্যা ও গুমের’ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের সাবেক আইজিসহ কয়েকজন সদস্যের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধে ট্রাইব্যুনালে।