বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে এখন আর কিছুই নেই। মানুষের অধিকার বলতে আর কিছুই নেই। একটা ভয় আর ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সত্যি কথা বলতে কী বাংলাদেশে এখন কেউ আর কথা বলতে, লিখতে সাহস করেন না। এর কারণ হচ্ছে সবার মধ্যে ভয়-ত্রাস কাজ করছে। আর ফ্যাসিবাদের প্রধান হাতিয়ারই হচ্ছে মানুষের মধ্যে এই ভয় আর ত্রাস সঞ্চার করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার সফল হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের কথা আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি বলে। নিজেদের তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে। কিন্তু স্বাধীনতার সব আশা–আকাঙ্ক্ষাকে পায়ে দলে–পিষে ধ্বংস করেছে এই আওয়ামী লীগই। তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের পরে আমাদের সংবিধানকে ভেঙে দিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস, চারটি রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল আওয়ামী লীগ। আজকে তারা ভিন্ন কায়দা নিয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে বলছেন হাইব্রিড রেজিম। অর্থাৎ সরকার গণতন্ত্রকেও ব্যবহার করছে, নির্বাচনকেও ব্যবহার করছে। কিন্তু নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী সরকার, স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা করছে। আজ বাংলাদেশে আমরা সেই জায়গায় এসে পড়েছি। এ দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই, মানুষের অধিকার বলতে কিছুই নেই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে আইনের শাসনের ওপর। এখন আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। এখন চলছে এক ব্যক্তির শাসন আর তাদের দলের লোকজনের শাসন। তারা যা–ই বলবে তা–ই হবে।
প্রশাসনই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে যে প্রশাসনই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। তাঁর প্রশ্ন, সরকার কী আওয়ামী লীগ চালায়, নাকি অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে প্রশাসন চালায়।
আইনজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে ভয়াবহ এই দানবকে প্রতিহত করতে হবে। এ কারণে বারের নির্বাচনগুলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আইনের শাসনের পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি নির্বাচিত হয়ে আসেন, তাহলে আইনের শাসনের পক্ষে কথা বলার লোক পাওয়া যাবে। আর যদি না হয়, তাহলে কথা বলার লোক পাওয়া যাবে না এবং জনগণ সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আপনারা সুশাসনের পক্ষে দাঁড়ান, গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ান। তাহলে দেখবেন আমরা বহু দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হব। আইনজীবীরা হচ্ছে সমাজের অগ্রণী শ্রেণি। আপনারা যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে জনগণ এগিয়ে আসবে এবং ভয়াবহ স্বৈরাচার–ফ্যাসিবাদের হাত থেকে এ দেশ মুক্তি পাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক বদিউজ্জামান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইন্তাজুল হক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।