হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস অভিনীত সত্য ঘঠনা অবলম্বনে নির্মিত Sully মুভিটা দেখেছিলাম গত বছর। টম হ্যাঙ্কস আমেরিকান ক্যাপ্টেন চেসলে সালেনবার্গারের ( স্যুলে) নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।
ছবির প্লট ছিলো এ রকম – ১৫ই জানুয়ারি ২০০৯ ইং সালে চেসলে সালেনবার্গার এবং তার সহ-পাইলট জেফ স্কাইলেস মিলে ১৫৫ জন যাত্রি নিয়ে ইউএস এয়ায়ওয়েজ এর ফ্লাইট ১৫৪৯ নিয়ে আমেরিকার LaGaurdia এয়ারপোর্ট থেকে Charlotte Douglas এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলেন। যাত্রার কিছুক্ষণ পরেই ভূপৃষ্ঠ হতে আনুমানিক ২৮০০ ফিট ওপরে পাখির ঝাক বিমানের ইঞ্জিনে আছড়ে পড়ে এবং বিমানের দুটো ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। ওই অবস্থায় বিমান নিকটস্থ এয়ারপোর্ট এ নিয়ে অবতরণ করানো সম্ভব ছিল না। স্যুলে স্কাইলেস এর সাথে পরামর্শ করে নিজের বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেন হাডসন নদীতে বিমান জরুরি অবতরণ করাবেন। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে হাডসন নদীতে সফলতার সাথে বিমানটি অবতরণ করান এবং মৃত্যুর হাত থেকে বাচিয়ে দেন ১৫৫ জন যাত্রীকে । ঐ ঘঠনার পর প্রথমে যদিও স্যুলে বিমানটি নিকটস্থ এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করাতে পারতেন কিনা সেটা নিয়ে তদন্ত হয় কিন্তু তদন্তে প্রমাণিত হয় ঐ অবস্থায় বিমান নিরাপদে নিকটস্থ এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করা সম্ভব ছিল না। স্যুলে ন্যাশনাল হিরোতে পরিণত হয়।
ইউএস প্রেসিডেন্ট জজ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা তার বিচক্ষণতার জন্য ধন্যবাদ প্রদান করেন। বারাক ওবামা তার প্রেসিডেন্সিয়াল দায়িত্ব গ্রহন অনুষ্টানে স্যুলে এবং তার টিমকে আমন্ত্রন জানান। তাদের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বিশেষ রেজুলেশন পাশ করে। ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ক্যাপ্টেন।নওশাদ বাংলাদেশ বিমানের একজন দক্ষ পাইলট ছিলেন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ১৪৯ যাত্রী, পাঁচজন কেবিন ক্রু ও অন্যান্য অফিসার নিয়ে রাত তিনটার দিকে ওমানের মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ক্যাপ্টেন নওশাদ সাথে ফার্স্ট অফিসার মেহেদী হাসান ।
বিমানটি উড্ডয়নের সময় একটি চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। বিমানটি আকাশে উড়ানোর পর আর মাস্কাট বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১৮ টন জ্বালানি আর ৬০ টন ওজনের বিমানটির। সব মিলিয়ে ৭৮ টন ওজনের বিমানটি জরুরি অবতরণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। একটু এদিক-সেদিক হলেই বিস্ফোরিত হতো উড়োজাহাজটি। তবে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা চালিয়ে ঢাকায় সফলতার সাথে জরুরি অবতরণ করান বিমানটি। ক্যাপ্টেন নওশাদ ও তার টিমের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় বেচে যায় ১৪৯ যাত্রী ও ক্রুরা। গত ২৭ শে অগাস্ট ২০২১ ইং মাসকাট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট বিজি ০২২ মোট ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ককপিটের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করান ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম । এবারো বেচে যান বিমানের সকল যাত্রী ও ক্রুরা।
পরবর্তীতে ভারতের নাগপুরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ক্যাপ্টেন নওশাদকে । তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় কোমায়’ চলে যান। ৩০ অগাস্ট ক্যাপ্টেন নওশাদকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে ৩০ অগাস্ট মৃত্যুবরণ করেন আমাদের জাতীয় হিরু ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম । তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতা আমেরিকান ক্যাপ্টেন চেসলে সালেনবার্গারের এর ছেয়ে কোন অংশে কম নয়।
ক্যাপ্টেন নওশাদ ও তার টিমকে আমাদের এভিয়েশন সেক্টরে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আরো বেশি সম্মানিত করা উচিৎ ছিল, অন্তত এখন তাকে মরণোত্তর সম্মানিত করা উচিৎ। আমাদের উচিৎ সকল সেক্টরেই জাতীর সূর্য সন্তানদের সবসময় যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান জানানো। গভীর শ্রদ্ধার সাথে করছি আমাদের বীর ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমকে । তার আত্বার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদৌস নসিব করুন।
লেখক- এম শাহনেওয়াজ মনির
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট