আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আবারও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিনের ব্রিফিংয়ে আসাম-ত্রিপুরা দখলের পক্ষে কথা বলার ইস্যু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা ও শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার মতো কিছু প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর দখলে নেওয়ার ফলে সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই প্রসঙ্গটিও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ের দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে বলেও জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিনের ব্রিফিয়ংয়ে এক প্রশ্নকারী জানতে চান, সম্প্রতি ড. ইউনূসের প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টা — যাকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হাসিনাকে উৎখাতের মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল — পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামসহ ভারতের অংশকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের পক্ষে বিতর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ড. ইউনূসের সাথে ঘনিষ্ঠ — খুব ঘনিষ্ঠ — সহযোগী ব্যক্তি এই কথা বলায় মার্কিন সরকার কি এই বিবৃতিটিকে উদ্বেগের সাথে দেখছে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করার জন্য এই ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও পরামর্শ দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি স্বীকার করব যে— আমি এই ধরনের কোনও মন্তব্য সম্পর্কে অবগত নই। আপনি এখন আমাকে যা পড়ে শোনালেন সেটি ছাড়া আমি এটি সম্পর্কে অন্য আর কিছুই জানি না। সাধারণ নিয়ম অনুসারে, যখন আমি কোনও মন্তব্য করতে দেখিনি, সঠিক প্রসঙ্গে বিবেচনাও করিনি, সে বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।
এছাড়া সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার প্রধান আসামি ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে ওই প্রশ্নকারী মন্তব্য জানতে চান। তবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এরপর ওই প্রশ্নকারী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে এই বিষয়টির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত রয়েছি এবং তা হলো— বাংলাদেশ সরকারকে এই বিষয়ে স্পষ্ট করে দেওয়া, যেমনটি আমরা বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমরা বিশ্বাস করি— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা উচিত। স্বাধীনতা বহাল রাখা উচিত, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সম্মান করা উচিত এবং এই ধরনের মামলাগুলো আইনের শাসন এবং সংবাদপত্রের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
পরে এক সাংবাদিক বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মিয়ানমার অংশটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাখাইন প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি ও ভাঘ্যে ঠিক কী ঘটতে চলেছে বলে আপনি মনে করছেন?
জবাবে মিলার বলেন, আমরা এই ঘটনাবলীর দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি এবং সংঘাত ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আমরা উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে সহায়তা করার বিষয়টি আমাদের জন্য অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার বার্মায় নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে উদারতা দেখিয়েছে এবং আমরা রোহিঙ্গা ও বার্মার অন্যান্য দুর্বল সম্প্রদায়ের সদস্যদের যারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।
পরে ওই সাংবাদিক সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুতে হবে। সাধারণ নির্বাচনের এই ঘোষণাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার কোনও জবাব দেননি এবং পরবর্তীতে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে জানান।